Wednesday 23 November 2011

বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের পিটুনিতে ব্যবসায়ীর মৃত্যু : দৌলতপুরে কৃষককে অপহরণ

ডেস্ক রিপোর্ট

যশোরের বেনাপোলের পুটখালী সীমান্তে এক গরু ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিএসএফ সদস্যরা। অন্যদিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত এলাকা থেকে তারা ধরে নিয়ে গেছে এক কৃষককে। বিস্তারিত আমার দেশ প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
বেনাপোলে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা : বেনাপোলের পুটখালী সীমান্তে বাতেন আহম্মেদ নামে বাংলাদেশী এক গরু ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিএসএফ। গতকাল ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
পুটখালি বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার আফজাল হোসেন জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে বাংলাদেশী একদল ব্যবসায়ী ভারত থেকে গরু কিনে দেশে ফিরছিলেন। এ সময় ভারতের আংরাইল সীমান্তের বিএসএফ সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। অন্যরা এ সময় পালিয়ে গেলেও বাতেনকে ধরে বিএসএফ সদস্যরা পিটিয়ে হত্যা করে। পরে তারা তার লাশ নিয়ে যায়। নিহত বাতেন যশোরের শেখহাটি এলাকার খায়রুল বাসারের পুত্র। এ ঘটনায় উভয় সীমান্তে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দৌলতপুর সীমান্তে কৃষক অপহরণ : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত এলাকা থেকে এক বাংলাদেশী কৃষককে অপহরণ করে নিয়ে গেছে বিএসএফ। বিজিবি সদস্যরা ওই কৃষককে ফেরত পেতে বিএসএফের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিজিবি সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুরে দৌলতপুর উপজেলার ভারত সীমান্ত সংলগ্ন রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের দেরেশ মণ্ডলের ছেলে খবির উদ্দিন (৩১) বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডে ঘাস কাটতে ছিল। এ সময় ভারতের মধুগাড়ি ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। তাকে ফেরত পেতে বিজিবি বিএসএফের সঙ্গে আলোচনায় বসে।
এ ব্যাপারে বকমারী ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার আ. মালেক জানান, দু’দেশের অমীমাংসিত জমিতে ওই কৃষক ঘাস কাটছিলেন। খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে সমঝোতা হবে বলে তিনি জানান। এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিচার ছাড়া হত্যার দায়মুক্তিকে উত্সাহী করবে : বিএসএফের হত্যায় বিজিবির নিষ্ক্রিয়তা সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ঠেলে দিচ্ছে


স্টাফ রিপোর্টার
সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা, আহত করা ও অপহরণ বিষয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের নিষ্ক্রিয়তা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। গতকাল অধিকার অক্টোবর মাসের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনে সীমান্ত হত্যা ও অপহরণ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ মন্তব্য করেছে।
অধিকারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, অক্টোবর মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৫ নাগরিক, ৮ জন নিহত হয়েছেন গণপিটুনির শিকার হয়ে। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন এক ব্যক্তি। বিএসএফ আরও ৩ বাংলাদেশীকে আহত করেছে এবং ৬ বাংলাদেশীকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। অক্টোবর মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের আলোকে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়।
অধিকারের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, অক্টোবর মাসে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ৪৭ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জনই হচ্ছে কন্যাশিশু। বাকি ১২ জন হলেন প্রাপ্তবয়স্কা নারী। ৩৫ কন্যাশিশুর মধ্যে আবার ৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১ জন। ধর্ষণের কারণে আত্মগ্লানি সহ্য করতে না পেরে এক কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে।
যদিও ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরে ইয়াসমিন নামে এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে মানবাধিকার ও নারী সংগঠনগুলো দেশব্যাপী তোলপাড় করেছিল। এখন প্রতিনিয়ত ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ড ঘটছে। কিন্তু নারী সংগঠনগুলো একেবারেই নীরব।
অধিকারের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গত মাসে সাতক্ষীরায় তাদের একজন নারী মানবাধিকার কর্মী বখাটেদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছেন। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলাও হয়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়, কনকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তির সত্যায়িত অনুলিপি চেয়ে পেট্রোবাংলাকে বিশিষ্ট ৩ নাগরিকের চিঠির জবাব ২৯ দিনেও পাওয়া যায়নি। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী বিশিষ্ট ৩ নাগরিক এ চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠির জবাব না দেয়ায় অধিকার মানুষের তথ্য জানার অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছে। এদের মধ্যে একজন কৃষক, দুইজন নিরীহ সাধারণ মানুষ ও একজন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা রয়েছেন। রিপোর্টে বলা হয়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমি সবসময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ছিলাম। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এটা রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রীর ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়’ বক্তব্যটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দায়মুক্তিকেই উত্সাহিত করছে বলে অধিকার মনে করে। বিএসএফ কর্তৃক হত্যাকাণ্ড ও অপহরণের ঘটনায় অধিকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তায় নিন্দা জ্ঞাপন করছে। অধিকার মনে করে, বিএসএফের এ ধরনের আগ্রাসী মনোভাব এবং বিজিবির সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন অনিয়ম বিষয়েও অধিকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।