Wednesday 29 June 2011

সিলেট সীমান্তে জনতার প্রতিরোধে এবার রক্ষা পেল ৫০ একর ভূমি : প্রতিবাদকারীদের বিএসএফের হুমকি, বিজিবিকে দেখা যায়নি














মো. দেলোয়ার হোসেন, জৈন্তাপুর (সিলেট)
সিলেট সীমান্তে জনতার প্রতিরোধের মুখে এবার রক্ষা পেল বাংলাদেশের ৫০ একর জমি। জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পাদুয়া সীমান্তের সোনারহাট মনাইকান্দি, কুলুমছড়া এলাকায় ১২৬৪নং পিলারের ৪-এস থেকে ১২৬৬নং পিলারের ১-এস পর্যন্ত গতকাল প্রায় ৫০ একর ভূমি ভারতকে সমজিয়ে দেয়ার কথা ছিল। এরই লক্ষ্যে বাংলাদেশের পক্ষে সহকারী পরিচালক (জরিপ) দবির উদ্দিন, ভারতের পক্ষে সানক্লিনের নেতৃত্বে উভয় দেশের ১৫-২০ জন জরিপ প্রতিনিধি দল ১২৬৪নং পিলারের ৪-এস থেকে জরিপ কাজ শুরু করে। দুপুর ১২টায় কুলুমছড়া গ্রামের ৫ শতাধিক জনতা জরিপ কাজে বাধা দেন। জরিপ বিষয়ে জানতে চাইলে জরিপ টিম এলাকাবাসীকে বলে, এখানে কতটুকু ভূমি আছে এ বিষয়ে জরিপ কাজ হচ্ছে। স্থানীয় জনতা আগে থেকে জানতে পেরেছেন—জরিপ করে বাংলাদেশের প্রায় ৫০ একর ভূমি ভারতকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। এরই প্রতিবাদে গ্রামবাসী জরিপ কাজে বাধা দেন। তখন বিএসএফ গ্রামবাসীকে তাড়া করতে থাকে। একপর্যায়ে বিএসএফ বাংলাদেশের ৫০ গজ ভেতরে প্রবেশ করলে জনতা আরও বেশি উত্তেজিত হন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করতে থাকেন। সীমান্তের ধারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে জীবনের বিনিময়ে ভূমি রক্ষা করার জন্য মানবপ্রাচীর গড়ে তোলেন সীমান্তবাসী। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্ত প্রহরী বিডিআরের নতুন নামধারী বডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি সদস্যদের তখন ওই এলাকায় দেখা যায়নি। এর আগে গত শনিবার (১৮ জুন) সিলেটেরই তামাবিল সীমান্তে একইভাবে গণপ্রতিরোধের মুখে বাংলাদেশের ভূখণ্ড যৌথ জরিপের নামে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।গত ডিসেম্বর থেকে সীমান্তে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সীমান্ত পিলার পরিদর্শন, অপদখলীয় ভূমি চিহ্নিতকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং গ্রুপের যৌথ জরিপ কাজ শুরু হয়। ভারতীয় বিএসএফ ও নাগরিকরা বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে জরিপ কাজে বাধা দেয়। গত ৬ মাস ধরে একাধিক বৈঠকের পর জরিপ কাজ করতে দেয়নি ভারতীয় নাগরিকরা। গত ২ ও ৩ জুন ভারতীয় হাইকমিশনার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারি পর্যায়ে বৈঠকের পর আবার জরিপ কাজ শুরু হয়। এই বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা আজও সীমান্তবাসী জানেন না। সীমান্তবাসী, বিজিবি ও প্রশাসনকে আড়াল করে উচ্চপর্যায়ের জরিপ টিম ভারতকে বাংলার ভূখণ্ড তুলে দিতে এই জরিপ কাজ করছে বলে সীমান্তবাসী জানান। কুলুমছড়া এলাকার আজিজুর রহমান, জলিল মিয়া, আবদুল কাদির, মুখলেছ মিয়াসহ শতাধিক গ্রামবাসী এই প্রতিবেদককে জানান, ব্রিটিশ আমল থেকে আমরা এই এলাকায় বসবাস করে আসছি। ফসলাদি ফলানো আমাদের প্রধান কাজ। কিন্তু গত দু’বছর ধরে ভারতীয় বিএসএফের বাধার ফলে আমরা কৃষিকাজ করতে পারছি না। তারা আরও জানান, ১৯৫২ সালে ও ২০০২ সালে সীমান্তের জরিপ কাজ হয়। সীমান্তের এই ভূমিগুলো এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকারের নামে রেকর্ডভুক্ত আছে। এলাকাবাসী আরও জানান, ভারতীয় নাগরিক ও বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান, কৃষিজমি ও ফসলাদি দখল করে নিতে চায়। ভারতীয় এই আগ্রাসী তত্পরতা সীমান্তবাসী জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবেন। এলাকাবাসীর বাধার মুখে জরিপ না করে উভয় দেশের জরিপ দল ফিরে চলে যায়। এ বিষয়ে জরিপ টিমের সঙ্গে আলাপকালে তারা কোনো কথা বলতে রাজি নয় বলে জানান। তারা বলেন, উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে

জয়পুরহাটে আরও একজন নিহত : বিএসএফের উপর্যুপরি খুন

পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
জয়পুরহাটের পাঁচবিবির নন্দাইল সীমান্তে গতকাল ভোরে বিএসএফের গুলিতে ফজলু মিয়া (৩৯) নামে আরও এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। নিহত ফজলু জেলার পাঁচবিবি উপজেলার নন্দাইল গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে। মাত্র একদিন আগে বেনাপোলের ধান্যখোলা সীমান্তে আবদুুল আলিম (৩৫) নামে আরেক বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ।
জয়পুরহাট-৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধীন হাটখোলা সীমান্ত ফাঁড়ির নায়েব সুবেদার জাহাঙ্গীর আলম ও এলাকাবাসী জানায়, ভোর ৪টার দিকে ভারত সীমান্তের ২৭৯-এর ১৮ সাব-পিলার এলাকার কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে দিয়ে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের গরু দিতে আসে। বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ীরাও সেখানে যায়। এ সময় ভারতের সিঁধাই ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা ২ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। তাদের গুলি ফজলু মিয়ার (৩৯) গলায় বিদ্ধ হলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরে বিএসএফ লাশটি ভেতরে নিয়ে যায়। বিজেবির হাটখোলা সীমান্ত ফাঁড়ি লাশ ফেরত চেয়ে ও এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিএসএফের সিঁধাই ক্যাম্পে একটি পত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।