Saturday 29 January 2011

বিএসএফ গুলি করার পর কাঁটাতারে ৫ ঘণ্টা ঝুলে ছিল ফেলানির লাশ : অধিকারের রিপোর্ট


বিশেষ প্রতিনিধি

কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরীতে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানীর বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়েছে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। গতকাল রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অধিকারের মানবাধিকার কর্মীরা ফেলানীর বাবা, চাচা, বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার, ব্যাটালিয়ান অধিনায়ক, পুলিশ কর্মকর্তাসহ সরেজমিন সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে। অধিকারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় ফেলানীর কাপড় তারে আটকে যায়। এতে ভীত হয়ে সে চিত্কার করে ওঠে। এ অবস্থায় বিএসএফ খুব কাছে থেকে বুকে গুলি করে ফেলানীকে হত্যা করে। ৭ জানুয়ারি সকাল প্রায় ৬টায় কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা নাগেশ্বরীর দক্ষিণ রামখানা গ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর প্রায় ৫ ঘণ্টা ফেলানীর লাশ কাঁটাতারে ঝুলেছিল। পরে সকাল ১১টার দিকে লাশ খুলে নিয়ে যায় বিএসএফ।
অধিকারকে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম জানান, বিএসএফের কাছ থেকে লাশ ফিরে পেলেও ফেলানীর সঙ্গে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ফেরত পাননি তিনি। ফেলানীর মা নিজ হাতে মেয়ের বিয়ের গয়না পরিয়ে দিয়েছিলেন। সীমান্ত অতিক্রমকালে ফেলানীর কানে দুল, নাকে নোলক এবং হাতে সোনার চুড়ি ছিল। অল্প অল্প করে জমানো টাকা দিয়ে মেয়ের বিয়ের জন্য গয়না তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বিএসএফের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে অকালে প্রাণ হারালো ফেলানী। এ ঘটনার পর নুরুল ইসলাম অধিকারকে বলেন, তিনি আর ভারতে যেতে চান না এবং তার স্ত্রী ও অন্য সন্তানদের বাংলাদেশে এনে এখানেই বসবাস করতে চান।
কাশিপুর বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আবদুল জব্বার বলেন, বিএসএফ কর্তৃক নিরীহ কিশোরী ফেলানীর ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনাটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনার জন্য বিএসএফ কোনোরকম দুঃখ প্রকাশ করেনি।
২৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুর রাজ্জাক তরফদার জানান, বিএসএফের হত্যাকাণ্ডের জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে এবং ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ের আলোচনায় বিএসএফের কাছে এ ব্যাপারে কৈফিয়ত চাওয়া হবে। এটি শুধু আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন নয় বরং মানবাধিকারেরও চরম লঙ্ঘন।
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম অধিকারকে বলেন, তিনি ভারতের আসামের বংগাইগাঁও, টুনিয়াপাড়া, ভাওয়ালকুড়ি নামের জায়গায় তার স্ত্রী, ৩ মেয়ে ও ৩ ছেলে নিয়ে বসবাস করতেন। ৬ সন্তানের মধ্যে ফেলানী ছিল সবার বড়। নুরুল ইসলাম বাবার মৃত্যুর পর তার মা ও তিন ছেলেকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। অভাব-অনটনের কারণে নুরুল ইসলাম অনেক ছোট বয়সে আসামে চলে যান। সেখানে তিনি রিকশা চালিয়ে, ইটভাটায় কাজ করে জীবনযাপন করতেন। পরে নিজের দেশে কুড়িগ্রামে এসে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে আসামের বংগাইগাঁওয়ে চলে যান। সেখানেই তার সব সন্তানের জন্ম হয়। সেখানে তার একটি পানের দোকান আছে, যা তার স্ত্রী পরিচালনা করেন। ঘটনার প্রায় ৫-৬ মাস আগে নুরুল ইসলাম বাংলাদেশে এসে তার বড় মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক করেন লালমনিরহাটের কুলাঘাটে ফেলানীর খালাতো ভাই মো. আমজাদ আলীর সঙ্গে। ছেলে ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করেন। বিয়ের দিন ছিল ৮ জানুয়ারি ২০১১। মেয়ের বিয়ের জন্য ভারতের আসাম থেকে বাংলাদেশে মেয়েকে নিয়ে সীমান্ত পারাপারের জন্য তিনি ভারতীয় চোরাকারবারি মোশারফ হোসেন ও বুজরতের সঙ্গে ভারতীয় ৩০০০ রুপিতে চুক্তি করেন। এর জন্য তিনি ও তার মেয়ে ফেলানী গত ৬ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে মোশারফের বাড়িতে আসেন। এরপর রাত ১টায় মোশারফ তাদের নিয়ে কিতাবেরকুঠি সীমান্ত এলাকার কাঁটাতারের কাছাকাছি চলে আসে কিন্তু সুযোগ না পাওয়ায় চোরাকারবারি তাদের পারাপার করাতে দেরি করে। এভাবে সময় পার হতে থাকে এবং ভোর হতে শুরু করে। ফজরের নামাজের আজানের পর চোরাকারবারি মোশারফ নুরুল ইসলামকে সীমান্ত অতিক্রম করতে বলে। কিন্তু এ সময় তিনি পার হতে অনীচ্ছা প্রকাশ করলেও চোরাকারবারি মোশারফ তাদের জোর করেই মইয়ের মাধ্যমে কাঁটাতারের বেড়া পার করানোর উদ্যোগ নেয়। নুরুল ইসলাম বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও মোশারফ তাকে ঠেলে মইয়ে তুলে দেয়। তা না হলে তিনি আর কাঁটাতারের বেড়া পার হতে পারবেন না এবং তার টাকাও ফেরত দেয়া হবে না। একরকম বাধ্য হয়েই তিনি ফেলানীকে সঙ্গে নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করতে বাঁশের মইয়ে ওঠেন। নুরুল ইসলাম সফলভাবে কাঁটাতার পার হয়ে মইয়ের অপরপ্রান্তে চলে আসতে পারলেও ফেলানী মইয়ের মাঝপথে এলে একপর্যায়ে তার জামা কাঁটাতারের সঙ্গে আটকে গেলে সে ভয়ে চিত্কার শুরু করে। চিত্কারের শব্দ শুনে পাশে টহলরত বিএসএফ সদস্য কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলিটি ফেলানীর ডান বুকের ওপরের দিকে বিদ্ধ হলে ফেলানী কাঁটাতারের মধ্যে ঝুলে পড়ে। এ সময় নুরুল ইসলাম জীবন বাঁচাতে হামাগুড়ি দিয়ে মই থেকে নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কাঁটাতারের আঁচড়ে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। তিনি চিত্কার করে মেয়েকে ডাকতে থাকেন। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা তাকেও গুলি করতে উদ্যত হলে তিনি জীবন বাঁচাতে সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হন এবং কিছুদূর গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
কাশিপুর বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আবদুল জব্বার অধিকারকে জানান, গত ৭ জানুয়ারি আনুমানিক ৬টা ১৫ মিনিটে সংঘটিত ফায়ারের পরপরই অনন্তপুর বিওপির বিজিবি টহলদল ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে বিজিবি সদস্যরা তত্ক্ষণাত্ ফেলানীর লাশ দেখতে পায়নি। পরে সকাল ১০টা ৩০টার দিকে বিজিবি টহল দল কাঁটাতারের বেড়ার সঙ্গে নিহত ফেলানীর লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। ওইদিন সকাল ১০টা ৫০টার সময় বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া থেকে নিহত ফেলানীর লাশ সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের জন্য ভারতের কুচবিহারে নিয়ে যায়। আনুমানিক সকাল ১১টায় কোম্পানি কমান্ডার নায়েব সুবেদার মো. আবদুল জব্বার নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ ফেরত চেয়ে বিএসএফের কাছে চিঠি পাঠান এবং তাদের পতাকা বৈঠকে বসার অনুরোধ জানান। কিন্তু বিএসএফের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ৮ জানুয়ারি সকাল ১১টায় বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক শুরু হয় এবং সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে পতাকা বৈঠক শেষে বিএসএফ প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর নিহত ফেলানীর লাশ হস্তান্তর করে। পতাকা বৈঠকে তার নেতৃত্বে অনন্তপুর বিওপি ইনচার্জ হাবিলদার সানাউল্লাহসহ ১৩ জন বিজিবি সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কোম্পানি কমান্ডার রামব্রীজ রায়। এ সময় ভারতীয় পুলিশসহ ৩০ জন বিএসএফ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী থানার এসআই নুরুজ্জামান অধিকারকে বলেন, বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠককালে তিনি উপস্থিত থেকে ভারতীয় সংশ্লিষ্ট পুলিশ বাহিনীর কাছ থেকে লাশ গ্রহণ করেন। পরে এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ০১/১১, তারিখ ০৮/১/১১ইং সময়-১৩.২৫ ঘটিকা।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতলের আরএমও ডা. মো. নজরুল ইসলাম অধিকারকে বলেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে লাশের ময়নাতদন্ত করেছে। ৯ জানুয়ারি হাসপাতাল লাশটি পাওয়ার পর ৩ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দল গঠন করা হয়। দুপুর ২টায় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ১টি গুলি ফেলানীর বুকের ডানদিকে বিদ্ধ হলে গুলিটি ফেলানীর পাঁজরের পেছন দিয়ে বের হয়ে যায় বলে তিনি জানান।
২৭ বিজিবি ব্যাটালিনের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুর রাজ্জাক তরফদার অধিকারকে জানান, লাশটি একজন বাংলাদেশীর এটা জানার পর ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট এসএইচ মানিদ্র সিংয়ের সঙ্গে ৭ জানুয়ারি আনুমানিক ১২টায় টেলিফোনে কথা বলে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী কিশোরীকে গুলি করে হত্যা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং লাশ ফেরত দেয়ার জন্য কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে সহযোগিতা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। উভয়পক্ষের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফ কর্তৃক সংঘটিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ৭৪ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করে। সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক প্রতিনিয়ত বাংলাদেশীদের হত্যা আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন। অধিকার দাবি জানাচ্ছে, সীমান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং যে কোনো ঘটনার তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ভারতীয় সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে

Saturday 22 January 2011

বাংলাদেশী শিশুকে হত্যা ভারতের আগ্রাসী চরিত্রের প্রকাশ : ন্যাপ

স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বলেছেন, দেশ এখন কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকিসহ জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির বিরুদ্ধে সরকার নতুন নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। তিনি কুড়িগ্রামে ফুলবাড়ী সীমান্তে বিনা উস্কানিতে বিএসএফ বাবার সামনে মেয়ে ফেলানীকে হত্যার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই ঘটনা ভারতের আগ্রাসী চরিত্র ও সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির পরিচয় বহন করে।
গতকাল সকালে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশ (ন্যাপ) ঢাকা মহানগর আয়োজিত ‘মহাজোট সরকারের দুই বছর : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দলের ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক আনছার রহমান শিকদারের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। মহানগর সদস্য সচিব মো. শহীদুন্নবী ডাবলুর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত বারুরি, যুগ্ম মহাসচিব স্বপন কুমার সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামাল ভুইয়া, দফতর সম্পাদক মো. নুরুল আমান চৌধুরী টিটো, আহসান হাবিব খাজা, মল্লিক আবদুস সোবহান, মতিয়ারা চৌধুরী মিনু, সুলতানা সাঈদা শিল্পী, মোহাম্মদ কামালউদ্দীন, শাহ্ মো. শাহ্ আলম, বাহাদুর শামিম আহমেদ পিন্টু, মো. ওয়াজিউল্লাহ প্রমুখ।

সীমান্তে মানুষ হত্যায় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের নিন্দা

স্টাফ রিপোর্টার

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন ও মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইকবাল এক বিবৃতিতে সীমান্তে বিএসএফ-এর অব্যাহত নির্মম হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, কুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানীকে বিএসএফ নির্মমভাবে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে। ফেলানীর মতো এভাবে প্রতিনিয়তই একের পর এক বাংলাদেশীদের হত্যা করা হচ্ছে। আওয়ামী মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিগত দুই বছরে প্রায় পৌনে ২শ’ বাংলাদেশী নাগরিককে ভারতীয় বিএসএফ নির্মমভাবে হত্যা করেছে। শুধু গত বছরই প্রায় ১শ’ মানুষকে হত্যা করেছে এই হানাদার ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী। তারা আমাদের দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে সম্পত্তি দখল করে নিচ্ছে। প্রতিনিয়ত নিরীহ নাগরিকদের ধরে হয় নির্যাতন না হয় হত্যা করছে। কেউ অন্যায় করলে তার বিচার হতে পারে। কিন্তু নির্মমভাবে পাখির মতো গুলি করে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যার মাধ্যমে বিএসএফ সব ধরনের সীমান্ত আইন, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লংঘন করে চলছে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তারা বলেন, বিএসএফ এতটা নির্দয়, নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করে চললেও দেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকার এর কোনো প্রতিবাদ করছে না। এ থেকে প্রশ্ন জাগে আমরা কী দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হারিয়েছি? আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধ করে পিণ্ডি থেকে দেশ স্বাধীন করেছি দিল্লির কাছে সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়ার জন্য নয়। তারা বিএসএফ-এর এসব গর্হিত কর্ম এবং হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং সরকার যাতে বিষয়টি গুরুত্ব অনুধাবন করে কূটনৈতিক ফোরামে আলোচনাসহ প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে সে আহ্বান জানান।

রাজশাহী সীমান্তে গুলি করে দুই বাংলাদেশীকে মেরেছে বিএসএফ


রাজশাহী অফিস

রাজশাহীর মতিহার থানা এলাকার খানপুর সীমান্তে শনিবার রাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ গুলি করে দুই বাংলাদেশীকে মেরেছে। নিহতরা হলেন সিরাজুল ইসলাম ও জাহেদ উদ্দিন। বিএসএফ সদস্যরা নিহতদের লাশ ফেরত দেয়নি। তাদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভূগলঘরির জগন্নাথপুর এলাকায় বলে জানা গেছে।
মতিহার থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তবে থানার উপ-পরিদর্শক সোহেল রানা জানান, বিএসএফ সদস্যরা দুই বাংলাদেশী হত্যা করেছে বলে খবর পেয়েছি। বিজিবি নিহতদের লাশ ফেরত চাইলে বিএসএফ তা দিতে অস্বীকার করে। এ ব্যাপারে বিজিবি’র কাছ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে বিজিবি’র একটি সূত্র ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানায়, লাশ ফেরত পেতে গতকাল বিএসএফকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

ফেলানির লাশ ফেরত দিয়েছে বিএসএফ : বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল আজ

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

কিশোরী ফেলানির লাশ গতকাল ফেরত দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বিয়ের পিঁড়িতে বসার জন্য সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরল সে।
শুক্রবার ভোরে ফুলবাড়ী সীমান্তে উত্তর অনন্তপুর হাজীটারী গ্রামের আন্তর্জাতিক পিলার ৯৪৭/৩ এস পিলারের পাশে তাকে আটক করে পাশবিক নির্যাতন শেষে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। গতকাল বেলা ১১টায় ওই সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশী মেয়ে ফেলানির লাশ হস্তান্তর করা হয়। প্রায় এক ঘণ্টার এ পতাকা বৈঠকে নেতৃত্ব দেন বিজিবি কাশিপুর কোম্পানি কমান্ডার নায়েব সুবেদার আবদুল জব্বার ও ভারতীয় বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কোম্পানি কমান্ডার রাম ব্রিজ রায়।
জানা যায়, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা দক্ষিণ রামখানা গ্রামের নূরু মিয়া তার ষোড়শী কন্যা ফেলানিকে নিয়ে ভারতের আসাম থেকে গত শুক্রবার আসার সময় ৯৪৭/৩ এস আন্তর্জাতিক পিলারের ভারতীয় অভ্যন্তরে চৌধুরীহাট বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যদের নজরে পড়েন। নূরু মিয়া পালাতে সক্ষম হলেও ষোড়শী কন্যা বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে। বিএসএফ ওই ষোড়শী কন্যাকে পাশবিক নির্যাতন শেষে ভোরবেলা গুলি করে হত্যা করে। সকালে তার লাশ কাঁটাতারে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়। উল্লেখ্য, ফেলানির সঙ্গে তার আপন খালাতো ভাই লালমনিরহাট জেলার চরকুলাঘাট গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে আমজাদ আলীর (২২) বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আজ। কিন্তু পাষণ্ড বিএসএফ ফেলানিকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দেয়নি।

Saturday 8 January 2011

কাঁটাতারে আটকেপড়া কিশোরীকে গুলি করে মারল বিএসএফ

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

বিএসএফের গুলিতে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে গতকাল এক বাংলাদেশী কিশোরী নিহত হয়েছে। ওই কিশোরীর নাম ফেলানী (১৫)। নিহত ফেলানী হলো নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা বানারভিটা গ্রামের নুরু মিয়ার মেয়ে। এ ঘটনায় বিডিআর কড়া প্রতিবাদ ও লাশ ফেরত চেয়ে বিএসএফকে একটি চিঠি দিয়েছে। বর্তমানে ওই সীমান্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সীমান্তবাসী এবং বিডিআর সূত্রে জানা গেছে, সাত/আট বছর আগে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে পাচারকারীর কবলে পড়ে ভারতের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন নিহতের বাবা নুরু মিয়াসহ অন্য সদস্যরা। সেখানে বেশ কিছুদিন থাকার পর দালালদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে দিল্লিতে ইটভাটার কাজে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন ইটভাটার কাজে নিয়োজিত থাকার পর বৃহস্পতিবার দেশে ফেরার জন্য চৌধুরীহাট খেতাবের কুটি সীমান্তের ৯৪৭-এর থ্রি-এস পিলার সন্নিকটে আশ্রয় নেন তারা। গতকাল ভারতীয় চোরাকারবারিদের অর্থের বিনিময় সহযোগিতা নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া বাঁশের সাহায্যে টপকিয়ে আসার পথে ভোর সোয়া ৬টার সময় টহলরত বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় ফেলানী। এ সময় তার লাশ কাঁটাতারে ঝুলে থাকলেও অন্য সদস্যরা পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।
এদিকে গুলির শব্দ ও নিহতের খবর পেয়ে অনন্তপুর বিওপির বিডিআর সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং বাংলাদেশী জনসাধারণকে উত্তেজিত না হওয়ার জন্য বাধা দেন। উত্তর অনন্তপুর সীমান্তের আবু রায়হান জানান, ভোরবেলা তিনি নুরু মিয়াকে রক্তমাখা দেখে চমকে ওঠেন এবং তার কাছ থেকে জানতে পারেন বিএসএফের গুলিতে তার মেয়ে নিহত হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও মেয়েটির লাশ নিয়ে আসতে পারেননি। প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মেয়েটি আর্তচিত্কার শুরু করে এবং বাঁচাও বাঁচাও চিত্কার দিয়ে আধা ঘণ্টা পর অচেতন হয়ে পড়ে। পরে বিএসএফ সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর ঝুলন্ত লাশ নামিয়ে নিয়ে যায়। কাশিপুর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার আ. জব্বার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, লাশ ফেরত চেয়ে বিএসএফের কাছে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।

Friday 7 January 2011

টিপাইমুখের পর সুবনশিরি বাঁধ

ইলিয়াস খান

টিপাইমুখের পর এবার সুবনশিরি বাঁধ। বাংলাদেশের জন্য নতুন মরণফাঁদ। সিলেট সংলগ্ন ভারতের আসাম রাজ্যের সুবনশিরি নদীতে এই বাঁধ নির্মিত হচ্ছে জলবিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য। বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এই এলাকায় বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে খোদ ভারতের পানি বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং সমাজকর্মীরা বলেছেন, ‘টিপাইমুখ ও সুবনশিরিসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নির্মীয়মাণ বৃহত্ নদী বাঁধ প্রকল্পগুলো বরাক-ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ও বাংলাদেশের জন্য হিরোশিমা-নাগাসাকি ধ্বংসকারী আণবিক বোমার সমান এক জলবোমা।’
আসাম ট্রিবিউন পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গত মাসের শেষ সপ্তাহে ভারতের ন্যাশনাল হাইড্রো পাওয়ার করপোরেশন (এনএইচপিসি) সুবনশিরি প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করেছে। এতে বলা হয়, ‘এই বাঁধ নির্মাণ নিয়ে বিতর্ক এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় এখনও নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি।’
পরিকল্পনা অনুযায়ী, আসাম-অরুণাচল সীমান্তে ২০১১-১২ সালের মধ্যে এই বাঁধ নির্মাণ করার কথা। এখানে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করা হবে। প্রকল্পব্যয় আগের ৬ হাজার ২৮৫ কোটি রুপি থেকে ৮ হাজার ১৫৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। প্রসঙ্গত এই বাঁধ নির্মাণের জন্য ২০০৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর নদীশাসন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু প্রচণ্ড বিক্ষোভের কারণে আসাম রাজ্য সরকার সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করছে না।
জানা গেছে, এ প্রকল্পের কুফল তুলে ধরে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘আরণ্যক’ গত ডিসেম্বরে গৌহাটিতে ‘উত্তর-পূর্ব জলবিবাদ, সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় ভারতের পানি বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং সমাজকর্মীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দু’দিনব্যাপী এ আলোচনা সভায় সব বিশেষজ্ঞই স্পষ্ট ভাষায় বলেন, সুবনশিরি জলবিদ্যুত্ প্রকল্প ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সর্বনাশ ঘটাবে আর টিপাইমুখ গোটা বরাক উপত্যকাকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে।’ আলোচনায় ড. পার্থজ্যোতি দাস, কে জে জয়, অধ্যাপক এসি ভাগবতী, ড. চন্দন মোহন্ত, অধ্যাপক দুলালচন্দ্র গোস্বামী, অধ্যাপক এস জনকরাজন, বাস্তুকার নীরজ ভাগলিকর, রবীন্দ্রনাথ, গিরীন চেতিয়া, ড. নিম্মি কুরিয়ান, অজিত পাটোয়ারী, ড. সিদ্ধার্থ কুমার, ড. আর কে রঞ্জন, রাজু নেপচা, শ্যামল দত্ত, ড. সঞ্জিতা বড়ুয়া, ড. ননী গোপাল মোহন্তসহ বহু বিজ্ঞানী ও পরিবেশকর্মী বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, মিজোরাম এবং মেঘালয়ে ছোট-বড় জলবিদ্যুত্ প্রকল্প নির্মাণের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য দ্রুত বদলে যাচ্ছে এবং আঞ্চলিক জলবায়ুর লক্ষণীয় পরিবর্তন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। তারা বলেন, এসব প্রকল্প একদিকে যেমন বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ধ্বংস করছে, তেমনি জনবসতি বিন্যাস বদলে দিচ্ছে ও উষ্ণায়ন ঘটাচ্ছে। ছোট-বড় অসংখ্য জলাধার, বন ও কৃষিজমির সঙ্কোচন ঘটাচ্ছে। বনাঞ্চল সঙ্কুচিত হওয়ায় বন্য জন্তু-জানোয়ার, কীটপতঙ্গ ও সরীসৃপের জন্য এসব প্রকল্প হুমকি হয়ে উঠেছে।
বৃহত্ জলবিদ্যুত্ প্রকল্প নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সব বক্তাই এসব প্রকল্প স্থাপনের তীব্র বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ভূমিকম্পপ্রবণ এ এলাকায় সুবনশিরি ও টিপাইমুখের মতো যেসব প্রকল্প নির্মাণের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে, তার সোজা অর্থ হলো এসব প্রকল্প হাতে নিয়ে বিশাল ভাটি অঞ্চল বরাক-ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা আর বাংলাদেশের মাথার ওপর কয়েক ডজন হিরোশিমা-নাগাসাকি ধ্বংসকারী বোমার সমান জলবোমা তৈরি করে রাখা হচ্ছে। অন্য বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো না ঘটানো মানুষের ইচ্ছাধীন হলেও এসব জলবোমা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই। সামান্য মাত্রার ভূমিকম্প বা ভূমিধসের ফলে এসব বাঁধ মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে। আর তখন চোখের পলকে ভাটি আসাম-বাংলাদেশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
তারা জানান, একেকটি প্রকল্প নির্মাণের জন্য লাখ লাখ ব্যাগ সিমেন্ট প্রয়োজন হবে। এসব সিমেন্ট তৈরির জন্য নষ্ট হবে পাহাড়। লাখ লাখ লরি পাথরের জন্য একইভাবে পাহাড় কাটা হবে। বাঁধ নির্মাণের সময়ও পাহাড় কাটা হবে। একদিকে বিশাল জলাধার শত শত বর্গমাইল এলাকা পানিতে ডুবিয়ে নষ্ট করবে; অন্যদিকে পাথর-সিমেন্ট আর মাটি সরবরাহের জন্য নষ্ট হবে পাহাড়। এসব বাঁধ নির্মাণকালেই ভাটি এলাকার খাল-বিল, নদী-নালা, কৃষিজমি বালু আর পাথরে ভরে যাবে। কৃষিজমি নষ্ট হবে। খাল-বিলে পানি থাকবে না। জনবিন্যাস, জনবসতির অবস্থান বদলে যাবে। বক্তারা এসব বিস্তৃত ব্যাখ্যা করে আসাম রাজ্যের উভয় উপত্যকাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যে কোনোভাবে টিপাইমুখ, সুবনশিরিসহ সব বৃহত্ নদীবাঁধ প্রকল্প প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।
জানা গেছে, আসাম-অরুণাচলের সর্বস্তরের মানুষ এ প্রকল্প বন্ধের দাবি জানালেও বাঁধ নির্মাণে বদ্ধপরিকর দিল্লি। ভারতের সেন্ট্রাল ইলেকট্রিক অথরিটি আসাম সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ও ভারতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। দিল্লি তাতে কর্ণপাত করেনি। ঢাকা থেকে একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দলও দিল্লি সফরে যায়। বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞানী ও পানি বিশেষজ্ঞদের মতামতের কোনো গুরুত্ব না দিয়ে এই প্রতিনিধিরা প্রমোদ ভ্রমণ শেষ করে দেশে ফিরে আসেন এবং ভারতের পক্ষে রিপোর্ট দেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে এক বছরে বিএসএফের গুলিতে নিহত ১৩ আহত শতাধিক

ইমতিয়ার ফেরদৌস সুইট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সাধারণ বাংলাদেশীদের জন্য মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত। সদ্য পার হওয়া বছর ২০১০-এ শুধু এ জেলার সীমান্তেই বিএসএফের হাতে ১৩ বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। মূলত সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত নিরীহ বাংলাদেশী কৃষক ও গরু ব্যবসায়ীরাই এখন বিএসএফের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। সীমান্তে আর গোলাগোলি নয়—একাধিকবার এমন আশ্বাস দিয়েও তা রক্ষা করেনি বিএসএফ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী এমন একটি গ্রাম নেই, যেখানকার মানুষ বিএসএফের আগ্রাসনের শিকার হননি। সবচেয়ে বিপদের মুখে আছেন সাধারণ কৃষক ও গরু ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত সংলগ্ন জমিতে ফসল ফলাতে মাঠে যাওয়া এখন যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে এসব নিরীহ বাংলাদেশীর। প্রায়ই বাংলাদেশী কৃষক ও গরু ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে বিএসএফ সদস্যরা নির্বিচার গুলিবর্ষণ করছে। নোম্যান্সল্যান্ডের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থিত শত শত একর জমিতে চাষ করতে গিয়ে প্রতিদিন আতঙ্কে দিন কাটান কৃষকরা। যারা জীবন জীবিকার তাগিদে সব ধরনের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে জমি চাষ করতে অথবা সীমান্ত এলাকায় গরু আনতে যান তাদের অনেকেই আর প্রাণ নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেন না। গত বছর বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে নিহত হয়েছেন ১৩ বাংলাদেশী। এরা হলেন শিবগঞ্জ উপজেলার শিংনগর সীমান্তে মনিরুল ইসলাম, সদর উপজেলার ওয়াহেদপুর সীমান্তে শ্যামল কর্মকার, শিবগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর সীমান্তে মুকুল হোসেন, কিরণগঞ্জ সীমান্তে তোজাম্মেল হক, ওয়াহেদপুর সীমান্তে হাবিবুর রহমান হাবু, ফতেপুর সীমান্তে শফিকুল ইসলাম, চৌকা সীমান্তে রবু মিয়া, শিংনগর সীমান্তে মো. ফটিক ও ইসমাইল হোসেন, মনোহরপুর সীমান্তে সাইদুর রহমান, মনাকষা সীমান্তে মো, ফটিক, শিংনগর সীমান্তে আবদুল লতিফ এবং সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর মাসুদপুর সীমান্তে মো. মাহবুব। এছাড়া এক বছরে বিএসএফের নির্যাতনে আরও শতাধিক বাংলাদেশী আহত হয়েছেন।
প্রতিটি ঘটনার পর বিডিআরের পক্ষ থেকে সীমান্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের জন্য আহ্বান জানানো হলেও কিছুদিন পরই আবার সেই পুরনো চেহারাতেই ফিরে যাচ্ছে বিএসএফ। দু’দেশের সীমান্তে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে দু’দেশের বাহিনীর মধ্যে নিয়মিত পতাকা বৈঠকসহ প্রীতি ফুটবল, ক্রিকেট ও ভলিবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলেও সীমান্তে কমছে না বিএসএফের আগ্রাসন।

আন্তর্জাতিক দরপত্রে ছাপানো প্রাথমিকের বই এখনও সরবরাহ পায়নি সরকার : ১৭ লাখের মধ্যে ৬ লাখ ছাপানো হচ্ছে ভারতে

দিলরুবা সুমী

আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ছাপানো প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ১৭ লাখ কপি বিনামূল্যের বই এখন পর্যন্ত দিতে পারেনি কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) গতকালের তথ্যানুযায়ী ভারত থেকে ছাপিয়ে আনা বইগুলোর মধ্যে এখনও ৬ লাখ কপি দেশে আসেনি। দেশে কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন পর্যন্ত ১১ লাখ কপি বই দিতে পারেনি। অথচ শিক্ষামন্ত্রীর দেয়া সর্বশেষ সময় অনুযায়ী গত ২১ ডিসেম্বর এসব বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছানোর কথা ছিল।
এসব বইয়ের বেশিরভাগ আপদকালীন সময়ের জন্য সংরক্ষণ বা বাফার স্টকের বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বিভিন্ন নামে ক্ষমতার অতিরিক্ত কাজ নেয়ায় দেশের একটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এবং যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত বই দিতে পারেনি। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর এবং মাধ্যমিকের প্রায় সব বই এরই মধ্যে দেশের প্রায় সব স্কুলে চলে গেছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, এ বছর প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যের বোর্ডের বই দিতে সরকার ২৩ কোটি ২০ লাখ বই ছাপিয়েছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীর প্রায় ৫ কোটি বই ছাপানো হচ্ছে। এর প্রায় ৩ কোটি ভারতের দুটি এবং বাকি বই দেশের তিনটি প্রতিষ্ঠান ছাপানোর কাজ পেয়েছে। গত ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উত্সব দিবসে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, দেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে বই দিতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। সে হিসেবে আগামী শুক্রবার এই সময় শেষ হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাধ্যমিক পর্যায়ের মোট বইয়ের এক ভাগেরও অনেক কম বই যথাসময়ে জেলা পর্যায়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। মুদ্রণকারীরা জানান, যান্ত্রিক কিছু সমস্যার কারণে যেসব বইয়ের ছাপা খারাপ হয়েছে বা পাতা ছিঁড়ে গেছে সেগুলো খুঁজে বের করে এখন ছাপানো হচ্ছে। এটা কালকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির সভাপতি মো. তোফায়েল খান বলেন, এনসিটিবি যথাসময়ে আমাদের কাগজ, পজিটিভ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিদ্যুত্ সমস্যা ছিল মারাত্মক। তারপরও আমরা দেশীয় মুদ্রণকারীরা যথাসময়ে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের সব বই জাতীয় স্বার্থে শিক্ষাবর্ষের শুরুতে দেয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। সফলও হয়েছি। কিন্তু আমাদের আক্ষেপ হলো, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গত বছরের শুরুতে যে উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে দেশের বাইরে থেকে বই ছাপিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছিল শর্ত অনুযায়ী সেসব বইয়ের মান যথার্থ হয়নি। এমনকি যথাসময়ে বইপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়নি। এ কারণে যেসব শিশু জীবনে প্রথম স্কুলে গিয়েছে তাদের অনেকেই বছরের প্রথম দিন বই পায়নি। অথচ তার স্কুলের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বই পেয়েছে। এটা শিশুদের মানসিকভাবে কষ্ট দিয়েছে। এটা আমাদের জন্যও বেদনাদায়ক।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবদুল আউয়াল তালুকদার জানান, গতকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সরকারি স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি শ্রেণীতেই একটি, দুটি করে বিষয়ের বই বাকি আছে। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীর বইগুলোর কাগজের মান আগের চেয়ে ভালো হলেও ছাপার মান তত ভালো নয় বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. রেজাউল হক জানান, সমিতির অন্তর্ভুক্ত প্রায় দেড় হাজার স্কুলের বেশিরভাগই গতকাল পর্যন্ত সব বই পায়নি। সপ্তম শ্রেণীর ইংরেজি বইটি চাহিদার চেয়ে সব স্কুলই কম পেয়েছে। তার নিজের নিউ লাইফ ক্যাডেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ গতকাল পর্যন্ত তৃতীয় শ্রেণীর একটি বইও পায়নি। আগামীকাল উপজেলা শিক্ষা অফিসে তাকে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণীর বিজ্ঞান বইটি বাকি আছে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীর দু’একটি করে বিষয়ের বই বাকি আছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ধর্ম বিষয়ের বই কিছু বাকি আছে।
এদিকে এনসিটিবির পাঠ্যবই বিতরণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ কর্তকর্তা অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী গতকাল আমার দেশ-কে জানান, যারা বই বেশি নিয়েছিল তারা এখন শাস্তির ভয়ে ফেরত দিচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় সবই ঢাকা মহানগরীর। গত ২ জানুয়ারি রোববার থেকে গতকাল পর্যন্ত তিন দিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল থেকে প্রায় ১ লাখ বই ফেরত এসেছে। আগামীকাল পর্যন্ত অতিরিক্ত বই ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যারা নির্দিষ্ট সময়ে অতিরিক্ত বই ফেরত না দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর মধ্যে সরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সাময়িক বরখাস্ত, ওএসডি বা বদলি করা হতে পারে। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এমপিও বন্ধ করা হবে। আর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি বাতিল করা হবে।
অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী আরও জানান, সম্প্রতি ৩০৫টি প্রতিষ্ঠান বইয়ের চাহিদাপত্র দিয়েছে। নতুন এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রাজধানীতেই আছে ২৮৬টি। এছাড়া সাভারে ১৬টি ও রাজবাড়ীর তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে বই দেয়া হচ্ছে। গত তিন দিনে ঢাকা মহানগরীর নতুন ১৫৯টি স্কুলে প্রায় ১ লাখ বই বিতরণ করা হয়েছে। তবে পরিদর্শনে কয়েকটি স্কুল ভুয়া বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ভারতের জন্য আশুগঞ্জে ২৪৬ কোটি টাকায় নদীবন্দর হচ্ছে : একনেকে প্রকল্প অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

ভারতের পণ্য অভ্যন্তরীণ পরিবহনের সুবিধার্থে ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আশুগঞ্জ নদীবন্দর নির্মাণ করছে বাংলাদেশ। কলকাতা থেকে ত্রিপুরা ও সেভেন সিস্টারে পণ্য পরিবহনের স্বার্থে আশুগঞ্জ কন্টেইনার নির্মাণে বাংলাদেশকে অনুদান দেয়ার কথা ছিল ভারতের। বাস্তবে প্রকল্পটি নির্মাণে বাংলাদেশ ব্যবহার করবে ভারতীয় ঋণ। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২৪৬ কোটি টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে গতকাল প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত ১ বিলিয়ন ঋণ চুক্তি থেকে এ প্রকল্পের ২১৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এই প্রকল্প ছাড়াও ভারতীয় ঋণে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য তিনটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই ৩টি প্রকল্পে ভারতীয় ঋণ ব্যবহার করা হবে ৯২৭ কোটি টাকা। বিমানের জ্বালানি পরিবহনের জন্য এয়ারব্রেক ইকুইপমেন্টসহ ১০০ এমজি বগি ট্যাংক ওয়াগন ও ৫টি এমজি ব্রেক ভ্যান সংগ্রহ প্রকল্প। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ৫২ কোটি টাকা অবশিষ্ট ২৫ কোটি টাকা সরকারি বরাদ্দ। রেলওয়ের জন্য ৩০ বিজি ডিজেল ইলেক্ট্রনিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৬০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ থেকে ৪২৫ কোটি আর সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হবে অবশিষ্ট ১৮৩ কোটি টাকা। রেলওয়ের জন্য ১০ সেট ডিজেল ইলেক্ট্রনিক মাল্টিপল ইউনিট (বগি) সংগ্রহের আরও একটি প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩১ কোটি টাকা, যার মধ্যে ভারতীয় ঋণ ২৩১ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ সরকারের ১০০ কোটি টাকা। ভারতীয় ঋণে এ ৪টি প্রকল্পসহ মোট ২ হাজার ৩১৮ কোটি টাকার ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক।
সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী একে খন্দকার সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন। এ সময় পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, আমাদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য বন্দরটি নির্মাণ করা হলে ভারতও এটি ব্যবহার করতে পারবে। তবে ভারতের অনুদান না দেয়ার কারণটি পরিকল্পনামন্ত্রী সুস্পষ্ট করে বলেননি।

সুন্দরবন থেকে চার জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

সুন্দরবনে মাছ শিকার করতে যাওয়া শ্যামনগর উপজেলার চার জেলেকে বিএসএফের টহল টিমের সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আটক জেলেদের বরাত দিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় বশিরহাট কারাগারের এক পুলিশ সদস্য তাদের পরিবারকে ফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
শ্যামনগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের মৃত আছান ঢালীর ছেলে আজিজুল ঢালী (৪৬), তার দুই ছেলে আবদুর রউফ ঢালী (২১) ও বক্কার ঢালী (১৪) এবং একই গ্রামের আবুল হোসেন গাজীর ছেলে আওরঙ্গ গাজী (৩৮) ২৩ ডিসেম্বর পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কৈখালী স্টেশন থেকে পাশ নিয়ে সাদা মাছ ধরার জন্য সুন্দরবনে যান। বনে যাওয়ার তিনদিন পর সুন্দরবনের সীমান্তবর্তী রায়মঙ্গল নদী সংলগ্ন কাছিকাটায় সাদা মাছ ধরার সময় বিএসএফের শমসেরনগর ক্যাম্পের সদস্যরা আজিজুল ঢালীসহ ওই চার জেলেকে আটক করে নিয়ে যায় এবং ৩১ ডিসেম্বর তাদের বশিরহাট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আ. বারী জানান, বনে মাছ ধরতে গিয়ে ওই চার জেলে গত দশদিন ধরে নিখোঁজ।
তিনি জানান, আটককৃতদের কারাগারে হস্তান্তরের পর তাদের অনুরোধে বশিরহাট কারাগারের এক পুলিশ সদস্য গতকাল সন্ধ্যায় মোবাইলের মাধ্যমে ঘটনাটি নিখোঁজ জেলেদের পরিবারকে জানায়। আটককৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় থানা ও বিজিবিকে আজ সকালেই অবহিত করা হবে বলে তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন।

পানিচুক্তির ১৫ বছর : পদ্মার বুকে ধু-ধু বালুচর



জহুরুল ইসলাম, পাবনা

ত্রিশ বছর মেয়াদি পানিচুক্তি স্বাক্ষরের ১৪ বছর পেরিয়ে ১৫ বছরে পা দিল; কিন্তু বাংলাদেশ এখনও ভারত থেকে চুক্তি অনুযায়ী গঙ্গার পানিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারেনি। ভারতের উন্নাসিক ও স্বার্থপর মনোভাব বাংলাদেশকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে। চুক্তি বাস্তবায়নের প্রথম বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ১০ দিন বাংলাদেশে পানি পাওয়ার কথা ছিল ৬ লাখ ৭৫ হাজার ১৬০ কিউসেক; কিন্তু পাওয়া যায় ৫ লাখ ৬৯ হাজার ২৫৯ কিউসেক। অর্থাত্ ১৯৯৭ সালের জানুয়ারির প্রথম ১০ দিনে ভারত ১ লাখ ৫ হাজার ৯০১ কিউসেক পানি কম দিয়েছিল। বিগত ১৪ বছরে প্রতি শুকনো মৌসুমে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ কখনও হিস্যা অনুযায়ী পানি পায়নি।
ফলে আজ শুকনো মৌসুমে পদ্মার বুকে ধু-ধু চর। তার বুকে চলছে চাষাবাদ।
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদি পানিচুক্তি হয়। বাংলাদেশের পক্ষে তত্কালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের সে দেশের প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে ১৯৪৯-৮৮ সালের পানিপ্রবাহের (৪০ বছরে গড়) হিসাব করে দু’দেশের মধ্যে পানি ভাগাভাগি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
পরবর্তী বছর অর্থাত্ ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দু’দেশের মধ্যে ভারতের অংশে গঙ্গা নদীর পানি ভাগাভাগি চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু হয়। প্রতি বছর শুকনো মৌসুমে ৫ মাস অর্থাত্ ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এ চুক্তি অনুযায়ী পানিবণ্টনের কথা। পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ পরিমাপ করা হয়। দু’দেশের প্রকৌশলী ও পানি বিশেষজ্ঞরা প্রতি মাসে তিন পর্যায়ে অর্থাত্ ১০ দিন পরপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহের পরিমাপ রেকর্ড করে তা যৌথ নদী কমিশনে পাঠিয়ে থাকে।
ইতোমধ্যে ভারত থেকে পানিপ্রবাহ পরিমাপের জন্য সে দেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দু’জন বাংলাদেশে এসেছেন। তারা হলেন রামজিত্ বার্মা ও পিডি কুমার গণেশ। অপরদিকে বাংলাদেশের পক্ষে পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ ও পানি পরিমাপ টিমে আছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশিদ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলী মুর্তজা এবং মো. মোফাজ্জল হোসেন।
এদিকে পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে নদীর বুকজুড়ে ধু-ধু বালুচর। রেল সেতু ও সড়ক সেতুর নিচে চাষাবাদ হচ্ছে। নদীর পানিপ্রবাহ একেবারেই স্থির। এ অবস্থায় আজ পানিচুক্তি ১৫ বছরে পড়ল। গতকাল দু’দেশের পানি পর্যবেক্ষণ টিম হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে সকাল ৯টা থেকে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করে

আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রফতানি বন্ধ

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

গতকাল থেকে কোনো কারণ ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে আগরতলার ব্যবসায়ীরা। এ কারণে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বন্ধ রয়েছে। তবে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাছ রফতানি হয়েছে। শুধু মাছ আমদানি করবে বলে জানিয়েছেন আগরতলার ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ-ভারতের কাস্টমসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তাদের কোনো সমস্যা নেই।
বন্দরের আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ত্রিপুরার আগরতলার ব্যবসায়ীরা কোনো কারণ ছাড়াই মাছ ছাড়া আর কোনো পণ্য নেবে না বলে জানান। এতে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। তিনি আরও বলেন, এ অবস্থা কতদিন চলতে পারে তার কোনো সঠিক জবাব পাওয়া যায়নি ওই পাড়ের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। আখাউড়া স্থলবন্দর কাস্টমস কর্মকর্তা (এলসিও) আবুল বাশার চৌধুরী জানান, দুপুর ১২টা পর্যন্ত শুধু মাছ রফতানি হয়েছে ভারতে। অন্য কোনো পণ্য যায়নি। আগরতলার কাস্টমস কর্মকর্তা জানান, তাদের পক্ষ থেকে সমস্যা নেই, তারা মাল নিতে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। আমাদেরও কোনো সমস্যা নেই। আগরতলার ব্যবসায়ীরা মালামাল আমদানি করছে না।

অধিকারের বার্ষিক প্রতিবেদন : ২০১০-এ প্রতি তিন দিনে ১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার

বিশেষ প্রতিনিধি

গেল বছরটিতে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রতি ৩ দিনে গড়ে একজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। গুম হয়েছেন ১৬ জন—আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে নিয়ে যাওয়ার পর যাদের খোঁজ কেউ পায়নি। ৪ জন সাংবাদিন নিহত এবং আহত হয়েছেন আরও ১১৮ জন। ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৯১ জন নারী ও শিশু। গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ১৭৪ ব্যক্তি। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে এক বছরের প্রতিবেদনে এ তথ্যগুলো উল্লেখ করেছে।
অধিকারের তথ্য অনুসারে ২০১০ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ছিল নাজুক। ২০০৯-এ ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ (ইউপিআর)-এর শুনানিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানোর কথা বলেন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তা অব্যাহতভাবে চলেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে অন্তর্কলহ, চাঁদাবাজি, টেন্ডার দখল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস ও অবৈধ হল দখলের মতো ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নির্যাতন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, রাজনৈতিক সহিংসতা, সভা-সমাবেশ বন্ধে ১৪৪ ধারা জারি, গুম, গার্মেন্টস শ্রমিকদের নির্যাতন ও গ্রেফতার, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে ২০১০ সালে।
অধিকারের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশের ভূমি দখলসহ বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা, নির্যাতন, অপহরণ চালিয়ে যাচ্ছে। দুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত কয়েক দশক ধরে চরম সংযম প্রদর্শন করে এই সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু ভারত সরকার বা তাদের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর দিক থেকে কোনো আশাপ্রদ মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়নি। প্রতিনিয়ত সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ বাহিনীর হাতে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা, নির্যাতন ও অপহরণের শিকার হয়েছেন। এছাড়াও ভারতের উওর-পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্যের ‘আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার’ আদায়ের সংগ্রামে নিয়োজিত নেতাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে গ্রেফতারের পর ভারতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিজেদের জীবন রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে ‘আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার’ আদায়ের সংগ্রামে নিয়োজিত এই ভিন্নমতাবলম্বী নেতারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৫ (১) এর গ অনুচ্ছেদে বলা আছে, “...রাষ্ট্র সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ বা বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করিবেন।”
অধিকার-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ক্রসফায়ারে র্যাব এবং নির্যাতনের ক্ষেত্রে পুলিশ ছিল প্রধান অভিযুক্ত। সন্ত্রাস দমন আইন-২০০৯ ও বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন আইন-২০০৬-এর মাধ্যমে বিরোধীদের দমন এবং গোপনীয়তার অধিকারসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন করা হয়েছে। আদালত অবমাননা আইন ১৯২৬ এবং সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা’র সঙ্গে বিরোধপূর্ণ অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন আইনি সংশোধনীর মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহকে অকার্যকর, অগ্রহণযোগ্য ও নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস ছিল বছরজুড়ে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা ২০১০ সাল জুড়েই অব্যাহত ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন ভঙ্গ করে সন্দেহভাজন ব্যক্তি, বিপ্লবী বামপন্থী এবং নিরীহ ব্যক্তিদেরকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে। ২০১০ সালে ১২৭ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে র্যাব ও পুলিশ অথবা র্যাব-পুলিশের যৌথ কর্তৃক। অধিকার-এর তথ্যানুযায়ী ২০১০ সালে প্রতি ৩ দিনে গড়ে ১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। অধিকার-এর সংগৃহীত তথ্যানুযায়ী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ১২৭ জনের মধ্যে তথাকথিত ‘ক্রসফায়ার’-এ ১০১ জন, নির্যাতনে ২২ জন এবং গুলিতে ২ জন এবং ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে র্যাবের হাতে ৬৮ জন, পুলিশের হাতে ৪৩ জন, র্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে ৯ জন, র্যাব-কোসগার্ডের যৌথ অভিযানে ৩ জন, র্যাব-পুলিশ-কোসগার্ডের যৌথ অভিযানে ৩ এবং বিডিআর-এর হাতে ১ জন নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নির্যাতন
২০১০ সালে ৬৭ জন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক নির্যাতিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এঁদের মধ্যে ১১ জন র্যাবের হাতে এবং ৫৬ জন পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৬৭ জনের মধ্যে ২২ জন নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
জেল ও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে মৃত্যু
২০১০ সালে ১১০ জন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে মারা গেছেন। এঁদের মধ্যে ৬ জন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে থাকাকালীন ক্রসফায়ারে, ২২ জন নির্যাতনে এবং ১ জন গুলিতে মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এই সময়ে ৬০ জন ব্যক্তি জেল হেফাজতে ‘অসুস্থতাজনিত’ কারণে মারা গেছেন। এ সময়ে ২ জন ব্যক্তি কোর্ট হেফাজতে, ২ জন থানায় এবং ১ জন র্যাব হেফাজতে মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিডিআর বিদ্রোহের অভিযোগে আটক ১৫ জন বিডিআর সদস্য জেল ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে মারা গেছেন।
গুম
২০১০ সালে ১৬ জন ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভিকটিমের পরিবারগুলোর অভিযোগ উল্লিখিত ব্যক্তিকে সাদা পোশাকধারী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা র্যাব ও পুলিশের পরিচয় দিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
রাজনৈতিক সহিংসতা
২০১০ সাল জুড়েই প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে রাজনৈতিক সহিংসতার মাত্রা ছিল ব্যাপক। প্রধান দল দুটি একে অপরকে দোষারোপ করতে ব্যস্ত থেকেছে। অধিকার-এর তথ্য অনুযায়ী ২০১০ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২২০ জন নিহত এবং ১৩ হাজার ৯৯৯ জন আহত হন। এ সময়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ৫৭৬টি এবং বিএনপির ৯২টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ৩৮ জন নিহত এবং ৫ হাজার ৬১৪ জন আহত হন। অন্যদিকে বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ৭ জন নিহত ও ১ হাজার ১৪৬ জন আহত হন। এ সময়ে সভা-সমাবেশ বন্ধ করতে প্রশাসন বিভিন্ন এলাকায় ১১৪ বার ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা জারি করে।
নির্বাচনী সহিংসতা
অধিকার-এর তথ্যানুযায়ী ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে নির্বাচনী সহিংসতায় ২১৮ জন আহত হন। এদের মধ্যে প্রাকনির্বাচনী সহিংসতায় ১০৯, নির্বাচনের দিন ৪৬ এবং নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় ৬৩ জন আহত হন বলে জানা গেছে।
হরতাল
২০১০ সালের জুন ও নভেম্বর মাসে বিএনপি তিনটি হরতাল আহ্বান করে। হরতাল চলাকালে বিএনপির সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থক এবং পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে সারা দেশে হরতাল সমর্থকসহ ৩৫৫ জন আহত হন এবং পুলিশ ১৬৭ পিকেটারকে আটক করে। এছাড়া হরতালের আগের দিন হরতাল সমর্থনকারীরা যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা
২০১০ সালে সাংবাদিকরা বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হন। এ সময়ে ৪ সাংবাদিক নিহত, ১১৮ সাংবাদিক আহত, ৪৩ জন লাঞ্ছিত ও ৪৯ জন হুমকির সম্মুখীন হন। এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ১৭ সাংবাদিকের ওপর হামলা, ২ জনকে গ্রেফতার, ১ জন অপহৃত ও ১৩ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের অবস্থা
২০১০ সাল জুড়ে ছিল তৈরি পোশাক শিল্প কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা। শ্রমিকদের বকেয়া বেতন এবং ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার টাকার দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে ৭ শ্রমিক নিহত এবং ২ হাজার ৫৩৮ শ্রমিক আহত হন। এসব ঘটনায় শ্রমিক নেতা মন্টু ঘোষ, মোশরেফা মিশু, বাহারানে সুলতান বাহারসহ ২৫৯ শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিএসএফের মানবাধিকার লঙ্ঘন
২০১০ সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত ছিল। ওই বছর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ৭৪ বাংলাদেশীকে হত্যা করে। এদের মধ্যে ২৪ জনকে নির্যাতন এবং ৫০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সময়ে ৭২ জন বিএসএফের হাতে আহত হয়েছেন। বিএসএফের হাতে আহত ৭২ জনের মধ্যে ৩২ জন নির্যাতিত ও ৪০ জন গুলিবিদ্ধ হন। একই সময়ে ৪৩ বাংলাদেশী বিএসএফের হাতে অপহৃত হয়েছেন।
নারীর প্রতি সহিংসতা
২০১০ সালে নারীর প্রতি সহিংসতা অব্যাহত ছিল। এ সময় বহু নারী ধর্ষণ, যৌতুক, এসিড সন্ত্রাস এবং যৌন হয়রানির শিকার হন। মূলত নারীর প্রতি সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, আইন ও বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা, ভিকটিম ও সাক্ষীর নিরাপত্তার অভাব, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্নীতি, নারীর অর্থনৈতিক দুরবস্থা, দুর্বল প্রশাসন ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে নারী নির্যাতিত হন। ভিকটিম নারী বিচার না পাওয়ায় অপরাধীরা উত্সাহিত হয়েছে এবং গাণিতিকহারে সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে।
২০১০ সালে মোট ৫৫৬ নারী ও মেয়েশিশু ধর্ষণের শিকার হন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ২৪৮ নারী এবং ৩০৮ মেয়েশিশু। ওই ২৪৮ নারীর মধ্যে ৬১ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় এবং ১১৯ জন গণধর্ষণের শিকার হন। এছাড়া ২ নারী ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেন। ৩০৮ মেয়েশিশুর মধ্যে ৩০ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় এবং ৯৩ জন গণধর্ষণের শিকার হয়। এছাড়া ৪ মেয়েশিশু ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করে।
যৌতুক সহিংসতা : ২০১০ সালে ৩৮৭ নারী ও শিশু যৌতুক সহিংসতার শিকার হন। এদের মধ্যে ২৪৩ জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয় এবং ১২২ জন বিভিন্নভাবে অমানবিক আচরণের শিকার হন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময়ে ২২ নারী যৌতুকের কারণে নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন।
যৌন হয়রানি : ২০১০ সালে ৩২৬ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন। এদের মধ্যে ৭ জন বখাটেদের হাতে নিহত, ১২৯ জন লাঞ্ছিত বা আহত, ২৫ জন আত্মহত্যা, ৫ জন অপহৃত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৪ পুরুষ যৌন হয়রানিকারী বখাটেদের হাতে আক্রান্ত হয়ে নিহত এবং ১২৭ জন আহত হন।
এসিড সহিংসতা
২০১০ সালে ১৩৭ জন এসিড সহিংসতার শিকার হন; এদের মধ্যে ৮৪ নারী, ৩২ পুরুষ এবং ২১ শিশু। এছাড়া ২১ শিশুর মধ্যে ১৬ মেয়েশিশু এবং ৫ ছেলেশিশু এসিডদগ্ধ হয়।
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘন
২০১০ সালে ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২ জন নিহত এবং ২৪৪ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ২৩টি মন্দির ভাংচুর হয়েছে। অপরদিকে জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনায় ৬ জন নিহত এবং ১৪০ জন আহত হন।