Friday 31 December 2010

সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা নীরব ভূমিকায় : ভারতীয় লোকজন বাংলাদেশে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে



হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি

ভারতীয় লোকজন বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে খর্প নদী থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তা দেখেও বিজিবি (বিডিআর) কোনো প্রতিবাদ করছে না। অথচ বাংলাদেশী লোকজন সীমান্তবর্তী ওই নদীতে মাছ ধরতে গেলে ভারতীয় বিএসএফ মারমুখী হয়ে বাধা দিচ্ছে। মাছ ধরতে গিয়ে গত ৭ দিনে বিএসএফের গুলিতে ২ বাংলাদেশী নিহত হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোলাপাড়া, সিঙ্গিমারী, বড়াইপাড়া, গেন্দুকুড়ি, দইখাওয়া, আমঝোলসহ গোটা জেলার সীমান্তে খর্প নদীর অবস্থান। ওই নদীর পশ্চিম ও দক্ষিণ তীর বাংলাদেশী ভূখণ্ড এবং পূর্ব ও উত্তর তীর ভারতীয় ভূখণ্ড। বাংলাদেশী লোকজন সীমান্তে মাছ ধরতে গেলে বিএসএফ বাধা দেয় এবং অস্ত্র উঁচিয়ে তেড়ে আসে। অপরদিকে ভারতীয় লোকজন বিজিবির সামনেই বাংলাদেশী ভূখণ্ডে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতে বিজিবি বাধা দিচ্ছে না—এমন অভিযোগ সীমান্তবাসীর। সীমান্তবর্তী লোকজন অভিযোগ করেন, আমরা আমাদের জমিতে মাছ ধরতে বা ঘাস কাটতে গেলে বিএসএফের পাশাপাশি ভারতীয় লোকজনও বাধা দেয়। বিএসএফ অস্ত্র উঁচু করে গুলির হুমকি দিলে আমরা ভয়ে পালিয়ে আসি। অথচ ভারতীয় লোকজন বাংলাদেশী বিওপি ক্যাম্পের কাছে এসে মাছ ধরে ও ঘাস কেটে নিয়ে গেলেও কিছুই করে না। বিষয়গুলো বিজিবিকে জানানো হলেও কোনো কাজ হয়নি। গত শুক্রবার সকালে গোতামারী গ্রামের গোলাম মোহাম্মদের ছেলে সাইফুল ইসলাম দইখাওয়া সীমান্তে মাছ ধরতে গেলে ভারতীয় বড় মরিচা ক্যাম্পের বিএসএফ বাংলাদেশে ঢুকে তাকে গুলি করে হত্যা করে। এর দু’দিন পর বুড়িমারী সীমান্ত এলাকা থেকে বিএসএফ আলতাব হোসেনের ছেলে বেলাল হোসেন নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে। এ ব্যাপারে লালমনিরহাট বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আসলাম জানান, বিএসএফ গত ৭ দিনে ২ বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করে। ভারতীয় লোকজন বাংলাদেশে প্রবেশের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা কোনো ছাড় দিতে রাজি নই

কংগ্রেস প্রকাশিত বইয়ের তথ্য : বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পেছনে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোই দায়ী

সফিকুল ইসলাম, কলকাতা

কংগ্রেসের ১২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত পুস্তিকা ‘কংগ্রেস অ্যান্ড দ্য মেকিং অফ দ্য ইন্ডিয়ান নেশনস’-এ বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও সেই সময়কার কার্যকলাপের জন্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ, বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদকেই দায়ী করা হয়েছে, তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাওয়ের ভূমিকাকে লঘু করে দেখানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সম্পাদনা করা বইয়ে লেখা হয়েছে ১৯৮০ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রচারে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার ডাক এবং সেস্থানে রামমন্দির করার আহ্বান জানানো হয়। এরপর বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানীর রাম রথযাত্রায় দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ায়। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ডাকে এক সমাবেশে উত্তর প্রদেশের তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং প্রথম উত্তেজক ভাষণ দেন। এরপর এলকে আদভানী, উমা ভারতী, মুরলী মনোহর যোশীর মতো বিজেপি নেতাদের বক্তব্য রাখার মধ্য দিয়ে এমন উত্তেজনা ছড়ায় যে, ‘করসেবক’ নামধারী উগ্র হিন্দুরা শাবল, গাইতি ইত্যাদি নিয়ে মসজিদের মিনারসহ অন্যান্য স্থানে উঠে পড়ে এবং মসজিদকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। বইয়ে লেখা হয়েছে, সুপ্রিমকোর্ট বলেছিল, মসজিদ সুরক্ষার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং সে দায়িত্ব পালনের কথা দিলেও তিনি তা পালন করেননি। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধে এবং প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও ১৯৯২ সালের ৭ ডিসেম্বর দেশের সব সাম্প্রদায়িক সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন বলে পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। পুস্তিকাটিতে রাজীব গান্ধীর প্রশংসা করা হলেও তার ভাই সঞ্জয় গান্ধীর নিন্দা করা হয়েছে। দেশে জরুরি অবস্থার মূল্যায়ন করতে গিয়ে স্বীকার করা হয়েছে, ওই সময়ে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব হয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপ তো বটেই বিচার ব্যবস্থাও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও খর্ব করা হয়েছিল। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধী সীমাহীন ক্ষমতা ভোগ করেছিলেন বললেও সমালোচনার প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিলেন তার পুত্র সঞ্জয় গান্ধীই। পরিবার পরিকল্পনা থেকে বস্তি উচ্ছেদ তার স্বৈরাচারী মনোভাবের কথাই খোলাখুলি স্বীকার করেছে কংগ্রেস। আত্মসমীক্ষার ওই বইয়ে বোঝানো হয়েছে ক্ষমতার উত্স ছিলেন সঞ্জয়ই। কংগ্রেসের এই মূল্যায়নে মোটেই সন্তুষ্ট নয় বিজেপি। তাদের বক্তব্য, নিজেদের ভুল অন্যের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন প্রণব মুখার্জিরা।
প্রসঙ্গত, প্রয়াত সঞ্জয় গান্ধীর স্ত্রী মানেকা গান্ধী ও পুত্র বরুণ এখন বিজেপির সংসদ সদস্য। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সঞ্জয়কে এবং বাবরি মসজিদ ইস্যুতে নেতাদের ভূমিকা কি আড়াল করতে চাইছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন কংগ্রেসের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন।

টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে আসামে বিক্ষোভ



শফিকুল ইসলাম, কলকাতা

মনিপুরের টিপাইমুখ বরাক নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বুধবার আসামের শিলচরে বিশাল মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নরসিংহটোলা মাঠে সমাবেশের পর বের হয় মিছিল। প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা এক স্মারকলিপি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিসি নাথের কাছে পেশ করা হয়। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্মারকপত্র পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় শক্তিমন্ত্রী এবং আসাম ও মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সমাবেশ ও মিছিল কার্যসূচির আয়োজক কমিটি আন পিপলস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (কোপ) এবং সোসাইটি অব অ্যাকটিভিস্টস ফর ফরেস্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সেফ)। এই ইস্যুতে একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মসূচিতে অংশ নেয় বরাক ভ্যালি ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস অব ইয়ুথ অর্গানাইজেশন, বরাক ভ্যালি স্টুডেন্টস ফ্রন্ট অল আসাম ট্রাইবাল সংঘ, অল বরাক স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতি সংগঠনের কর্মকর্তারাও। অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন মনিপুরী মহিলা।
কোপ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পীযূষ কান্তি দাস এবং সেফ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জিষ্ণু দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, রবাক নদীর ওপর টিপাইমুখে ১৮০ মিটার উঁচু বাঁধ নির্মিত হলে তা বৃহত্তর অঞ্চলের পরিবেশে বিরাট প্রভাব ফেলবে। প্রস্তাবিত বাঁধকে তারা ওয়াটার বোম্ব বলে অভিহিত করে।
তারা বলেন, উজানে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে এতে ভাটি অঞ্চলের কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, সরকার তা একবারও ভেবে দেখেনি। অথচ প্রস্তাবিত বাঁধ বরাক উপত্যকার অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলবে। জীববৈচিত্র্য চরম বিঘ্নিত হবে। তারা পানি সঙ্কট, শস্য ক্ষেতের ওপর বিরূপ প্রভাব, নৌচালনার সমস্যা, নদী দূষণ ইত্যাদি আশঙ্কার কথাও তুলে ধরেন

Wednesday 29 December 2010

সিলেট সীমান্তে আড়াইশ’ কি.মি. কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ভারতের : করিমগঞ্জে ১৪৪ ধারা : নতুন বছরের শুরুতে সীমান্ত জরিপ

এটিএম হায়দার সিলেট

বৃহত্তর সিলেট সীমান্তে প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শেষ করেছে ভারত। আরও ১২২ কিলোমিটার বেড়া নির্মাণ চলছে। এমনকি কাঁটাতার থাকাবস্থায়ও করিমগঞ্জ সীমান্তে রাতকালীন ১৪৪ ধারা জারি রেখেছে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। চোরাকারবার রোধ ও বাংলাদেশ থেকে কথিত অনুপ্রবেশ রোধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে ভারতীয় পত্রিকায় বলা হয়েছে। এদিকে স্থগিত হয়ে যাওয়া ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত জরিপ নতুন বছরে শুরু হচ্ছে। রোববার বিকালে সিলেটের জেলা প্রশাসক পদুয়া সীমান্ত ঘুরে গেছেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কেবল আসাম ও মেঘালয়ে ৫৭০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ২৫০ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শেষ করেছে ভারত। এছাড়া ১২২ কিলোমিটারের বেড়া নির্মাণের কাজ বর্তমানে চলছে। সীমান্তের ১৩০ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়নি, যার বেশিরভাগ মেঘালয়ের জৈন্তা হিলস ডিস্ট্রিক এলাকায়। বর্তমানে এ এলাকা সীমান্তে ভূমির জরিপ কাজের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিএসএফের আসাম-মেঘালয় ফ্রন্টের ইন্সপেক্টর জেনারেল আরসি সাক্সেনা সম্প্রতি শিলংয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ এক বছরে ৪৫ লাখ ৪৩ হাজার ভারতীয় রুপির গরু, গাঁজা, কাঠসহ আটক করেছে। এছাড়া তিনি ভারতের বিভিন্ন সংগঠনের ৪২ উগ্রপন্থীকে আটক, ২ অস্ত্র ব্যবসায়ী, ৫০ লাখ রুপির ব্রাউন সুগার আটকের তথ্য দেন। এদিকে সিলেটের জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার
উপজেলার বিপরীতে আসামের করিমগঞ্জ জেলায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ১৪৪ জারি করেছে প্রশাসন। ভারতীয় পত্রিকার খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশ থেকে ভারতে উগ্রপন্থীদের প্রবেশ, চোরাকারবার রোধসহ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এক আদেশ জারি করে ভারত-বাংলা সীমান্তে রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ১০০ মিটার এলাকায় চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। করিমগঞ্জের ভাঙ্গা থেকে সরিষা পর্যন্ত এলাকা জাতীয় সড়কের পার্শ্ববর্তী সীমান্ত সংলগ্ন ২০০ মিটার এলাকা এবং কারখানা পুতনী থেকে লাফাশাইল পর্যন্ত সীমান্ত সংলগ্ন ৫০০ মিটার এলাকায় চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন কুশিয়ারা নদী ও তার তীরের ক্ষেত্রে একই আদেশ বলবত্ থাকবে। এছাড়া রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত লক্ষ্মীবাজার, টিলাবাজার, চুরাইবাড়ি, কুকিতল, চাঁদখিরা, আদমটিলা, মোকামটিলা, বিলবাড়ি, ফকিরবাজার থেকে লাতু-মহিশাসন পূর্ত বিভাগের সড়কেও যান চলাচল করতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীতে দেশি নৌকা নিয়ে চলাচল করতে পারবে না। এমনকি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ৫০০ মিটার এলাকায় গবাদিপশু নিয়ে চলাচল করতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় চাল, চিনি, মদ, কাপড়, সুপারি, তেল, বাঁশ, কাঠ নিয়ে চলাচল করতে পারবে না। তবে করিমগঞ্জ শহর এলাকায় এ আদেশ বলবত্ থাকবে না। অনুপ্রবেশ ও চোরাকারবার রোধে জেলা প্রশাসন এ আদেশ জারি করেছে।
অপরদিকে সিলেট সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশ সীমানা জরিপ নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে শুরু হতে পারে। ভারতে মেঘালয় রাজ্যের বিপরীত সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পদুয়া এবং জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবিবিল ও কেন্দ্রীয় হাওরে বিরোধপূর্ণ ভূমির জরিপ বিভিন্ন কারণে স্থগিত রয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসক আবু সৈয়দ মোহাম্মদ হাশিম রোববার বিকালে গোয়াইনঘাটের পদুয়া সীমান্ত পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে বিরোধপূর্ণ ভূমি নিয়ে বিজিবি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন।
উল্লেখ্য, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের প্রতাপপুরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত ঘটনাবহুল পদুয়া গ্রামের ২৩০ একর ভূখণ্ড ভারত জোরপূর্বক নিজেদের দখলে রেখেছে। আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার বিরাজমান অবস্থায় ভারত কর্তৃক জোরপূর্বক বেদখলে রাখা এই জমি গত ২৯ বছর ধরে বাংলাদেশের হাতছাড়া রয়েছে। সীমান্ত জরিপে পদুয়া ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ আশঙ্কা থেকে জরিপ চলাকালীন গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভারতীয় নাগরিক ও বিএসএফ সীমান্তে হাঙ্গামা সৃষ্টি করে। চলতি মাসের ৭ তারিখ দুই দেশের ভূমি সার্ভে কমিশনের যৌথ বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে সীমান্তের ভূমি জরিপ শুরু হয়। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে মেঘালয়-সিলেট সীমান্তের জরিপ শেষ হওয়ার কথা।

বুড়িমারী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী নিহত

লালমনিরহাট ও পাটগ্রাম প্রতিনিধি

হাতিবান্ধার দইখাওয়া সীমান্তে শুক্রবার বাংলাদেশী যুবক হত্যার তিনদিনের ব্যবধানে গতকাল ভোর সাড়ে ৫টায় লালমনিরহাটের বুড়িমারী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বেলাল হোসেন (২৫) নামের আরও এক বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। এ সময় বাবু নামের আরও এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে পাটগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত বেলাল হোসেনের লাশ বিএসএফ সদস্যরা টেনেহিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে গেছে। তিনি পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বামনদল গ্রামের আফসার আলীর ছেলে। এদিকে বাংলাদেশী যুবককে গুলি করে হত্যা ও লাশ টেনেহিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সীমান্তে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। গুলি করে যুবক হত্যা ও অন্য একজনকে গুলি করে আহত করার ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত যুবকের লাশ ফেরত না দেয়ায় ওই সীমান্তে বিজিডি-বিএসএফ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া বিনা উস্কানিতে বিএসএফের হাতে একের পর এক বাংলাদেশী হত্যার ঘটনায় সীমান্তবাসীরা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বিজিবি সূত্র জানায়, গতকাল ভোর সাড়ে ৫টায় পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী সীমান্তের ৮৩৮ নম্বর মেইন পিলার সংলগ্ন এলাকায় ভারতের ১০৪ বিএসবাড়ি ব্যাটালিয়নের বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশ অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশী যুবক বেলালকে লক্ষ্য করে পরপর ৭ রাউন্ড গুলি চালায়। এতে বেলাল নিহত এবং বাবু নামের অন্য একজন আহত হন। একপর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা তার লাশ টেনেহিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর শফিক জানান, বিএসএফের গুলিতে নিহত বেলাল ও আহত বাবু গরু আনতে ভারতে যাওয়ার সময় বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে পরপর ৭ রাউন্ড গুলি চালায়। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণের কারণে বেলাল হোসেন ঘটনাস্থলেই মারা যান। বিএসএফ সদস্যরা আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে তার লাশ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। লাশ ফেরত চেয়ে গতকাল সকাল ১০টায় বিশেষ দূত মাধ্যমে ১০৪ বিএসবাড়ি বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে বিএসএফের পক্ষ থেকে লাশ ফেরতের ব্যাপারে কোনো সাড়া মেলেনি।

আসামে টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচি

শফিকুল ইসলাম, কলকাতা

টিপাইমুখ বাঁধের বিরোধিতা করে আসামের শিলচরে আগামী মঙ্গলবার এক বিশাল মিছিল করার কর্মসূচি নিয়েছে কমিটি অন পিপলস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সংক্ষেপে কোপ। প্রস্তাবিত এই বৃহত্ নদীবাঁধ বিরোধী মিছিলে এ অঞ্চলের প্রতিটি দল, সংগঠনসহ ব্যক্তি বিশেষকেও অংশ নিতে কোপ এক বিবৃতিতে আবেদন জানিয়েছে। তাদের দাবি, টিপাইমুখ নদী বাঁধের বিরুদ্ধে এই মিছিল-সমাবেশ সম্পর্কে জনসাধারণের কাছ থেকে এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে।
টিপাইমুখে প্রস্তাবিত এই বাঁধের বিপদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে কোপ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘প্রস্তাবিত বাঁধের বহুবিধ ক্ষতির কথা ভেবে একদিকে বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ, সমাজকর্মীরা যেমন প্রতিবাদে সরব হয়েছেন, তেমনি এই অঞ্চলের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশেল জনতা, সংস্থা, সংগঠনও প্রতিবাদ-আন্দোলন করছে। এই বাঁধসহ বৃহত্ নদীবাঁধের বিরুদ্ধে এই ভূখণ্ডসহ অন্য এলাকায়ও আন্দোলনের সমুদ্রকল্লোল ক্রমে তীব্রতর হচ্ছে। মানবসভ্যতার পক্ষে সর্বনাশী বৃহত্ নদীবাঁধের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশের আন্দোলন আর চিন্তা-ভাবনা থেকে আমরা নিজেদের বিছিন্ন রাখতে পারি না। আমরাও তাদের চিন্তার সহযাত্রী ও আন্দোলনের অংশীদার।’
কমিটি অন পিপলস অ্যান্ড এনভায়রন-মেন্ট আরও বলেছে, টিপাইমুখের জলবোমাতুল্য বিশাল এই ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য আর ১৮১ মিটার উচ্চতার প্রস্তাবিত বরাক বাঁধ ভাটি বরাকের শিয়রে আক্ষরিক অর্থেই সর্বক্ষণের সমন। অতি স্পর্শকাতর ভূমিকম্প অঞ্চল পাঁচের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় মাটি ভরাট পদ্ধতির এই প্রায় ষাটতলা উঁচু বাঁধ কোনো কারণে ভেঙে গেলে বরাক-সুরমার অস্তিত্ব চিল-কাকেরাও খুঁজে পাবে না। সুরমা-বরাকের ইতািস-ঐতিহ্য সব বিলীন হয়ে যাবে। ধুয়েমুছে বিশাল এই জনপদ এক কবরস্থান বা শ্মশানভূমিতে পরিণত হবে। বাঁধের উজান এলাকায় আবহামনকাল ধরে বসবাস করে আসা মার-মনিপুরী-নাগা-কুকি ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর মানুষদের ছিন্নমূল হতে হবে। ইন্দো-বার্মা, ইন্দো-মালয় আর ইন্দো-চীন জীববৈচিত্র্য মানচিত্রের এই অঞ্চলে বিদ্যমান বিরল আর বিলুপ্তপ্রায় বহু জীববৈচিত্র্য বিলীন হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে শত শত গাছ-গাছড়া আর জানা-অজানা পাখি-প্রাণীর কলকাকলি। বর্ষা বৃষ্টিতে বন্যার তোড় বাড়বে আবার শীতে থাকবে না পানি। মূল নদীর বুক শুকিয়ে যাওয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী সমতল এলাকার ছোট-বড় সব নদী-নালা, খাল-বিল-পুকুর-ডোবায় পানি থাকবে না। পানির মাত্রা কমে যাওয়ায় বরাক নদী থেকে বহু প্রজাতির মাছ নিশ্চিহ্ন হবে।
টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধী সংস্থার দাবি, এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি যাদের বিপন্ন হতে হবে, সেই বরাক উপত্যকার আমজনতা কোনোভাবেই চুপ থাকবে না। সংগঠিত হয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ করবেই তারা।

বাংলাদেশকে শতকোটি টাকা ঠকিয়ে ওয়ারিদ কিনেছে এয়ারটেল : দেশের টেলিকম খাতকে ভারতীয়করণের চক্রান্ত চলছে

জিয়াউদ্দিন সাইমুম

শুরুতেই বাংলাদেশকে শতকোটি টাকা ঠকিয়ে ওয়ারিদ টেলিকম কিনেছে ভারতী এয়ারটেল। অন্যদিকে ওয়ারিদ টেলিকম কেনার মাধ্যমে শুধু ভারতী এয়ারটেলই সুবিধা পায়নি, টেলিকম খাতে নতুন চাকরি সৃষ্টির নামে ভারত বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় টেলিকম খাতকে ভারতীয়করণেরও সুযোগ পেয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রান্সপোর্ট, গার্মেন্ট, ইলেকট্রনিক্স, ওষুধ, খাদ্যপণ্য, পানীয়সহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ থাকলও টেলিকম সেক্টরে এটাই প্রথম। এদিকে বছরশেষে বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়বে বৈ কমবে না। আর এয়ারটেল সে ঘাটতির ব্যবধান আরও বাড়িয়ে দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
অভিযোগ রয়েছে, ভারতকে এ সুযোগটি করে দেয়ার পেছনের ব্যক্তি দু’জন হচ্ছেন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহাম্মেদ রাজু এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ। কারণ ওয়ারিদ টেলিকমের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে এ দু’জন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ওয়ারিদের মোট মূল্য ১ কোটি টাকা দেখিয়ে মাত্র ৭০ লাখ টাকার বিনিময়ে ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ ভাগ শেয়ার কিনে নেয়ার সুযোগ করে দেন এয়ারটেলকে। তবে টেলিকম বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এর পেছনে প্রশাসনের বড় কোনো কর্মকর্তার পরোক্ষ মদত থাকতে পারে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১-এর ধারা ৩৭(১) অনুসারে বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স পাওয়া কোনো কোম্পানি অন্য কোনো কোম্পানির কাছে লাইসেন্স বিক্রি করতে পারবে না; কিন্তু ৩৭(৩)-এর ঝ উপধারা অনুসারে শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবে। এই শেয়ার হস্তান্তরের সময় শেয়ারমূল্যের ৫.৫ ভাগ বিটিআরসিকে দিতে হবে। ওয়ারিদের ৭০ ভাগ শেয়ারের মূল্য ৩০ কোটি টাকা দেখালে এর ৫.৫ ভাগ অর্থাত্ ১১৫.৫ কোটি টাকা বিটিআরসিকে দিতে হতো। কিন্তু ৭০ শতাংশ শেয়ারের দাম নামমাত্র ৭০ লাখ টাকা দেখানোর কারণে দিতে হয়েছে ৭০ লাখ টাকার ৫.৫ ভাগ অর্থাত্ মাত্র ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে—এই আশঙ্কায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় পরবর্তী সময়ে এ আইনটিই পরিবর্তন করে ফেলে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির নামে সবচেয়ে বেশি শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে ওয়ারিদ টেলিকম লিমিটেড, যা এখন এয়ারটেলের নামে চলছে। এক তথ্যে দেখা গেছে, ঢাকা কাস্টমস হাউস দিয়ে আমদানি করা ১৫টি চালানে ওয়ারিদ টেলিকম এ পর্যন্ত ৬৯ কোটি ৬২ লাখ ৬৮ হাজার টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমদানি চালান আটক করে পুনরায় কায়িক পরীক্ষা করা হলে মিথ্যা ঘোষণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের শুল্ক ফাঁকির ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়। পরে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হলে শুনানির পর ঢাকা কাস্টমস কমিশনারের বিচারাদেশে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এর বিরুদ্ধে ওয়ারিদ কাস্টমস আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেছে বলে জানা গেছে।
গত ২০ ডিসেম্বর হয়ে গেল এয়ারটেলের লোগো উন্মোচন তথা খোলস পরিবর্তন পর্ব। নতুন স্লোগান ‘ভালোবাসার টানে, পাশে আনে’ নিয়ে তাদের লক্ষ্য ২০১৫ সালের মধ্যে এয়ারটেলকে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যবহারকারীর ভালোবাসাসিক্ত ব্র্যান্ডে পরিণত করা।
ওয়ারিদের যাত্রা শুরু হয়েছিল পহেলা বৈশাখে। এদেশের সংস্কৃতি ও লৌকিকতা তুলে ধরে চিত্রায়িত বাপ্পা মজুমদারের ‘সালাম বাংলাদেশ’ গানের মাধ্যমে। কিন্তু এয়ারটেলের প্রথম বিজ্ঞাপনটি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তো নয়ই, বরং বিজ্ঞাপনটি দেখে যে কারও ধারণা হতে পারে, এটি ভারতে চিত্রায়িত এবং ভারতীয় মডেল দ্বারা অভিনীতও বটে। ইউনিলিভারের কল্যাণে ইতোমধ্যেই দেশীয় চ্যানেলে ভারতীয় নায়ক-নায়িকাদের মুখশ্রী দেখা যাচ্ছে। শাহরুখ খানের পদধূলির সুবাদে ডেসটিনির চ্যানেল বৈশাখী একমাস অনবরত হিন্দি গানের আসর বসিয়েছিল। এখন সেই যাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে এয়ারটেল।
এয়ারটেল শুধু ভারতীয় মডেল দিয়ে বিজ্ঞাপন করেই ক্ষান্ত থাকেনি, তাদের লঞ্চিং বোনাঞ্জার প্রথম পুরস্কার হিসেবে তারা রেখেছে বলিউড সেলিব্রেটি জুটি সাইফ এবং কারিনার সঙ্গে ডিনারের সুযোগ। দৈনিক আমার দেশ-এর একজন পাঠকের ভাষায়, ‘ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বাদে অন্য কোনোভাবে ব্যাপারটিকে নিতে পারলাম না।’
এয়ারটেল শুরুতেই ঘোষণা দিয়েছে তারা বাংলাদেশে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। কিন্তু টেলিকরিডোর নিয়ে এয়ারটেলের দৌড়ঝাঁপ দেখে এ খাতের বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা হচ্ছে, এয়ারটেল বাংলাদেশের বিকাশমান টেলিকম খাতকে ভারতীয়করণের চেষ্টা করছে।

সিলেট সীমান্তে ভূমি জরিপ : বাংলাদেশের ৫৫ একর জমির মালিকানা দাবি ভারতীয়দের

এটিএম হায়দার, সিলেট

সিলেট সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার ভূমি জরিপ প্রক্রিয়া বিভিন্ন কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। গতকাল সোমবার কোথাও জরিপ অনুষ্ঠিত হয়নি। মেঘালয়ে বড়দিনের উত্সব, বাংলাদেশে গত সপ্তাহের ছুটি ছাড়াও মাঠপর্যায়ে সৃষ্ট কিছু সমস্যার কারণে চলতি সপ্তাহে নতুন করে জরিপ কাজ শুরু হচ্ছে না বলে একাধিক সূত্রের সঙ্গে আলাপ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
একটি সূত্র মতে, সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবির হাওর ও কেন্দ্রীবিলে ৫৫ একর জমি জরিপ শুরু না হতেই ভারতীয়রা সেগুলোর মালিকানা দাবি করে বসেছে। ওদিকে গোয়াইনঘাটের পদুয়ায় ভারতীয়দের হাঙ্গামা সৃষ্টির কারণে সিলেট-মেঘালয় সীমান্তে দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত জরিপের বিষয়টি এখন কিছুটা ঝুলে গেছে। কবে নাগাদ এখানে জরিপ শুরু হবে, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের জরিপ দলে দায়িত্ব পালনরত সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ড. মো. আবুল হাসান বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জরিপ কাজে উত্থাপন করা হয়েছে। ভারতীয়দের কাছেও তাদের কোনো ডকুমেন্ট থাকলে তা উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। কোনো অযৌক্তিক দাবি নিয়ে এলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি বলেন, মেঘালয়ে ক্রিসমাসের কারণে কয়েক দিন জরিপ বন্ধ রাখার জন্য তারা অনুরোধ জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের ভূমি রেকর্ড সার্ভে কমিশন গত ২৯ নভেম্বর তামাবিল সীমান্তে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বিরোধপূর্ণ ভূমির জরিপ শুরুর সিদ্ধান্তে ঐকমত্য হয়। সে মোতাবেক ৭ ডিসেম্বর গোয়াইনঘাট উপজেলা ভূমি অফিসের লোকজন প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে ৮ ডিসেম্বর মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু করেন। জরিপ চলাকালে জৈন্তাপুরের ডিবিবিলে ভারতীয়রা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভূমির মালিকানা দাবি এবং পদুয়ায় ভারতীয়দের উসকানিমূলক আচরণ জরিপকাজ ব্যাহত করেছে। তবে কানাইঘাটে সমস্যা ছাড়াই জরিপ সম্পন্ন হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুই দেশের জরিপ দলের গোয়াইনঘাটের পদুয়া ও জৈন্তাপুরের ডিবির হাওর কেন্দ্রীবিলে জরিপ শুরুর কথা থাকলেও তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে দেখা যায়নি। কী কারণে জরিপ শুরু হচ্ছে না, সে সম্পর্কে বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আগের সপ্তাহে জরিপ চলাকালে জৈন্তাপুর-মুক্তাপুর সীমান্তে ডিবির হাওর কেন্দ্রীবিলে ৫৫ একর জমি ভারতীয়রা নিজেদের বলে দাবি করায় জরিপ স্থগিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়টি উভয় দেশের জরিপ দল নিজ নিজ দেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছে বলে জানা গেছে। ভারতীয় একটি পত্রিকায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশী নাগরিকদের বাড়াবাড়ির কারণে পদুয়া ও মুক্তাপুরে জরিপ কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে সিলেটে ২১ রাইফেলসের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল খায়রুল কাদিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে বিডিআর বা বাংলাদেশী নাগরিকদের বাধা প্রদানের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, বিডিআর জরিপে অংশ নিচ্ছে না। জরিপ দলের সীমান্ত অতিক্রম ও তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু বিডিআর দেখে আসছে। জৈন্তিয়া শেকড় সন্ধানী গ্রুপের সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় নাগরিকদের ‘মামা বাড়ির আবদার’ রক্ষা না হওয়ায় সিলেটে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত জরিপের বিষয়টি স্থগিত হয়ে গেছে। গত ১৪ ডিসেম্বর জরিপ শুরুর আগেই ভারতের মেঘালয়ের মুক্তাপুর থানার লোকজন সমবেত হয়ে বাংলাদেশের ৫৫ একর জমি তাদের বলে দাবি জানাতে থাকে। এমনকি তারা এই জমি তাদের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানায়। বাংলাদেশ জরিপ দল তাদের এই আবদারে সাড়া না দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার থেকে যথারীতি জরিপ পরিচালনায় অনড় মনোভাব দেখায়। ফলে দুই দেশের জরিপ দলের ঐকমত্য না হওয়ায় তা স্থগিত হয়ে যায়। দুই দেশই তাদের ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি জানায় বলে ভারতীয় পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে। একটি ভারতীয় পত্রিকায় মুক্তাপুর-জৈন্তাপুর সীমান্তে জরিপ না হওয়ার জন্য সরাসরি বাংলাদেশের বাসিন্দাদের অভিযুক্ত করে। পত্রিকায় বলা হয়, ভারতের ১৩ সদস্যের জরিপ দল জৈন্তিয়া হিল ডিস্ট্রিক্টের মুক্তাপুর থানার কামপ্লিইং নদীতে সার্ভের জন্য বর্তমানে জরিপ শুরুর অপেক্ষা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রতাপপুর-পদুয়ায় দুই দেশের সীমান্ত জরিপে বাংলাদেশ পক্ষে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব ড. মো. আবুল হাসান এবং ভারতীয় মেঘালয়ের জরিপ বিভাগের সহকারী পরিচালক এ সাম পিয়াং জরিপ কাজে নেতৃত্ব দেন। যৌথ জরিপ দল গোয়াইনঘাটের পদুয়ার ১২৭০ নম্বর সীমান্ত পিলার থেকে ১২৭১ নম্বর পিলার পর্যন্ত স্থানে জরিপ পরিচালনা করে। গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর বিএসএফের ছত্রছায়ায় দেড় থেকে দুই শতাধিক ভারতীয় নাগরিক তীর-ধনুক নিয়ে বিরোধপূর্ণ ২৩০ একর জমিতে অবস্থান নিলে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। অবশ্য পরদিন পদুয়ার বিডিআর ও বিএসএফ কর্মকর্তাদের পতাকা বৈঠকে দুঃখ প্রকাশ ও জরিপ কাজে সহযোগিতার বিষয়ে ঐকমত্য হলে উত্তেজনা হ্রাস পায়। এদিন পদুয়ায় দুই দেশের সার্ভে দল তাদের নির্ধারিত কাজ পর্যালোচনা করে।
কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া সীমান্ত বাংলাদেশ ভারতের বিরোধপূর্ণ ভূমির যৌথ জরিপ কাজ কোনো সমস্যা ছাড়া শেষ হয়েছে। এই সীমান্তের ১৩১৮/১ নম্বর মেইন পিলার থেকে বিরোধপূর্ণ ভূমির ওপর বাংলাদেশ ভারতের বিরোধপূর্ণ ভূমির যৌথ জরিপ করা শুরু হয়।
একটি সূত্র মতে, মেঘালয়ের খাসিয়ারা খ্রিস্টান ধর্মালম্বী হওয়ায় আগামী ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনকে কেন্দ্র করে সেখানে উত্সবের আমেজ চলছে। সে কারণে জরিপ কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। দুই দেশের আগের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর জরিপ শেষ হওয়ার কথা। তবে ভারতীয় একটি পত্রিকায় বলা হয়, জরিপ কাজ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
উল্লেখ্য, গত এক বছর বিএসএফ পদুয়া থেকে শ্রীপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সীমান্তে একাধিকবার উসকানিমূলক ঘটনা ঘটায়। বিএসএফের সহযোগিতায় ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশের জমি থেকে ধান কেটে নেয় এবং গরু ধরে নিয়ে যায়। বিভিন্ন মহল থেকে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে অন্তত যৌথ জরিপের দাবি ওঠানো হলে গত ১২ জানুয়ারি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়। ঘোষণায় ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তি দু’পক্ষই মেনে চলবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি সীমানা চিহ্নিতকরণের জন্য জয়েন্ট বর্ডার ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেবিডাব্লিউজি) সক্রিয় করা হয়। গত ২৯ নভেম্বর তামাবিল আইসিপিতে উভয় দেশের ভূমি সার্ভে কমিশনের যৌথ বৈঠকে ৭ ডিসেম্বর থেকে গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর-কানাইঘাট সীমান্তের বিরোধপূর্ণ ভূমি জরিপের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী সিলেটের তিন উপজেলায় গত ৮ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ-ভারত বিরোধপূর্ণ ভূমির যৌথ জরিপের প্রারম্ভিক কাজ শুরু হয়।

সিলেটে পদুয়া সীমান্তে শক্তি বাড়িয়েছে বিএসএফ

এটিএম হায়দার সিলেট

ভারতের মেঘালয় রাজ্য সংলগ্ন সিলেটের সীমান্তে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সীমান্ত জরিপ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পুনরায় শুরু হতে পারে। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জরিপ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সম্প্রতি জরিপ চলাকালে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের বাড়াবাড়ি এবং ক্রিসমাস ও নববর্ষ উপলক্ষে বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে বিভিন্ন সূত্রমতে ভারতের জবল দখলে থাকা বাংলাদেশের পদুয়ায় সম্প্রতি বিএসএফ তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করলেও এর কারণ জানা যায়নি। এদিকে দুই দেশের কর্তৃপক্ষ জরিপ সম্পাদনে আশাবাদী থাকলেও মাঠপর্যায়ের সমস্যাগুলো নিরসন না হলে পুনরায় জরিপ শুরু হলেও তার সফলতা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। আগের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর জরিপ শেষ হওয়ার কথা। তবে ভারতীয় একটি পত্রিকায় বলা হয়, জরিপ কাজ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জরিপ দলের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জরিপ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হওয়ায় সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। জৈন্তাপুর সীমান্তের নিজপাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান
মখলিছুর রহমান দৌল্লা আমার দেশকে বলেন, সীমানা পিলার অনুযায়ী সঠিক সার্ভে হওয়া দরকার। এতে যার যার ভূমি সঠিকভাবে চিহ্নিত হবে। তিনি বলেন, তার ইউনিয়নের ডিবি বিলে ভারতীয়রা জরিপ শুরুর আগেই ৫৫ একর জমি তাদের বলে দাবি করে। তারা নিজেদের একতরফাভাবে তৈরি একটি ম্যাপও দেখায়। যা বাংলাদেশী জরিপ দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। সঠিক জরিপ হলে আমাদের ভূমি ভারতীয় জবরদখল থেকে মুক্ত হবে। এ ব্যাপারে পশ্চিম জাফলং ইউপি চেয়ারম্যান ফয়জুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার উপস্থিতিতে জরিপ শুরু করা হলে তখন বোঝা যাবে কারা জরিপ কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। সঠিক জরিপ হলে তার ইউনিয়নে জবরদখলকৃত সোনারহাট ও পদুয়ার জমি অবশ্যই ফেরত পাওয়া যাবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মেঘালয় থেকে প্রকাশিত পত্রপত্রিকায় বলা হয়েছে, আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে সীমান্ত জরিপ পুনরায় শুরু হবে। পত্রিকায় আরও বলা হয়, বড়দিন উপলক্ষে রাজ্যের জরিপ দল সাময়িকভাবে কাজে বিরতি দিয়ে ছুটিতে গেছেন। মুক্তাপুরে বাংলাদেশের লোকজনের আপত্তিতে জরিপে বিঘ্ন ঘটে বলে অভিযোগ তোলা হয়। এরই মধ্যে লোভাছড়ায় জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৯টি স্থান—লিংখহাট, পদুয়া, কুরিনালা, তামাবিল, আমলিয়ামপিয়িং, রঙখন, আমকি, আমিয়ালঙ ও মুক্তাপুরে সীমান্ত জরিপ করা হবে। পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জরিপ শেষ হওয়ার কথা।
সীমান্ত থেকে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, সাম্প্রতিক জরিপ শুরুর পর থেকে পদুয়ায় বিএসএফ অতিরিক্ত শক্তি বৃদ্ধি করেছে। গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর বিএসএফের ছত্রছায়ায় দেড়-দুই শতাধিক ভারতীয় নাগরিক তীর-ধনুক নিয়ে বিরোধপূর্ণ ২৩০ একর জমিতে অবস্থান নিলে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। অবশ্য পরদিন বিএসএফ পতাকা বৈঠকে এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে। বিভিন্ন সূত্রমতে, জরিপ এলাকাগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করেছে বিএসএফ। কি উদ্দেশ্যে বিএসএফ শক্তি বৃদ্ধি করেছে তা রহস্যজনক।
বাংলাদেশ ও ভারতের ভূমি রেকর্ড সার্ভে কমিশন গত ২৯ নভেম্বর তামাবিল সীমান্তে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বিরোধপূর্ণ ভূমির জরিপ শুরুর সিদ্ধান্তে ঐকমত্য হয়। সেই মোতাবেক ৭ ডিসেম্বর গোয়াইনঘাটের সোনারহাট সীমান্তে প্রাথমিক আলোচনা শেষে ৮ ডিসেম্বর মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু হয়। কিন্তু জরিপ চলাকালে জৈন্তাপুরের ডিবি বিলে ভারতীয়দের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভূমির মালিকানা দাবি এবং পদুয়ায় ভারতীয়দের উস্কানিমূলক আচরণে জরিপ কাজ ব্যাহত হয়। জরিপ চলাকালে ভারতীয়দের ‘বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার’—এ নীতি অবলম্বনসহ জবরদস্তি আচরণে জরিপের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে বলে বাংলাদেশের জরিপ কর্তৃপক্ষ মনে করছে।

Tuesday 28 December 2010

লালমনিরহাটে বিএসএফ’র গুলিতে ব্যবসায়ী নিহত : সীমান্তে উত্তেজনা

লালমনিরহাট ও হাতিবান্ধা প্রতিনিধি

লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া সীমান্তে গতকাল ভোরে বিএসএফের গুলিতে সাইফুর রহমান (২০) নামে এক যুবক ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে। ওই যুবকের লাশ বিএসএফ সদস্যরা টেনেহিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে গেছে। সাইফুল উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের গোলাপ হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় সীমান্তে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। হত্যার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশী বর্ডার গার্ড (বিজিডি)। ঘটনার ১০ ঘণ্টা পরও সাইফুলের লাশ ফেরত না দেয়ায় ওই সীমান্তে বিজিডি-বিএসএফ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। ফলে ওই সীমান্তের গ্রামবাসী ভয়ে আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছেন। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিডি) সূত্র জানায়, গতকাল ভোর ৬টায় হাতিবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া সীমান্তের ৯০১নং মেইন পিলারের সাব-পিলার ৪-এর কাছে ভারতের ৪৬ ব্যাটালিয়নের বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশে ঢুকে সাইফুলকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এতে সাইফুল গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এরপর তারা সাইফুলের লাশ টেনেহিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিডি)-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আসলাম হোসেন জানান, বিএসএফের গুলিতে নিহত সাইফুল গরু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি সীমান্তে ভারতীয় গরু নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। বিএসএফ সদস্যরা আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে তার লাশ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। লাশ ফেরত চেয়ে গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় বিশেষ দূতের মাধ্যমে ৪৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে লাশ ফেরতের ব্যাপারে কোনো সাড়া মেলেনি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুরো সীমান্তে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। যে কোনো মুহূর্তে আরও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটতে পারে বলে সীমান্তবাসী আশঙ্কা করছেন ।

দু’বছরে সরকার অর্ধশত উলফা নেতাকে ভারতে হস্তান্তর করেছে



স্টাফ রিপোর্টার

২০০৯ সালের শুরু থেকে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বাধীনতা সংগ্রামরত প্রায় ৫০ উলফা নেতাকর্মীকে আটকের পর ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন উলফা চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়া, বোড়ো বিদ্রোহী নেতা রঞ্জন দাইমারি, মণিপুরি বিদ্রোহী নেতা রাজকুমার মেঘেন। এদিকে উলফার শীর্ষনেতা পরেশ বড়ুয়া অভিযোগ করেছেন, তার ছেলেকে বাংলাদেশে অপহরণ করা হয়েছে।
কলকাতা প্রতিনিধির উদ্ধৃতি দিয়ে অনলাইন সংবাদ সংস্থা বিডিনিউজ জানিয়েছে, ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়া বৃহস্পতিবার ই-মেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে তার ছেলেকে বাংলাদেশে অপহরণের অভিযোগ করেছেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার এ অভিযোগ সম্পর্কে তার অজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পরেশ বড়ুয়া অভিযোগ করেন, তার কিশোর ছেলেকে যারা অপহরণ করেছে তারা ভারত সরকারের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য তাদের চাপ দিচ্ছে।
পরেশ বড়ুয়া বলেন, কিন্তু এতে কাজ হবে না। আসামের স্বাধীনতার লড়াইয়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ প্রাণ দিয়েছে, শহীদের ওই দীর্ঘ তালিকায় আমার ছেলের নাম যদি অন্তর্ভুক্ত হয় এবং যদি সেটা ঘটে তবে তার জন্য আমি প্রস্তুত আছি।
কিন্তু ছেলেকে কখন অপহরণ করা হয়েছে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানাননি। তবে ঘটনাকে ‘একটি ভারতীয় ষড়যন্ত্র’ হিসেবে ইঙ্গিত করলেও কারা এর নেপথ্যে থাকতে পারে সে বিষয়ে তিনি সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি।
বিবৃতিতে তিনি কিছু শীর্ষ উলফা নেতার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তারা এখন ‘যাবতীয় নীতিকথা বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছে’ এবং ভারত সরকারের সঙ্গে আপসের চেষ্টা করছে।
পরেশ বড়ুয়া এ ধরনের আপসকামিতার বিরোধিতা করে বলেন, আসামের সার্বভৌমত্বের বিষয়টি প্রাধান্য না পেলে ভারতের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না। তবে ভারত সরকার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
বলা হচ্ছে, উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোথাও আত্মগোপন করে আছেন। তার স্ত্রী ববি বড়ুয়া ওরফে সুফিয়া বেগম ও ছেলে তাহসিম বড়ুয়া ওরফে আকাশ খান ঢাকায় অবস্থান করছেন। ভারতের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনায় রাজি হওয়ার পর আসামের কারাগার থেকে অনেক উলফা নেতাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
আসাম সরকার উলফা নেতা অরবিন্দ রাজখোয়ার জামিন আবেদনের বিরোধিতা না করায় খুব শিগগিরই তাকেও মুক্তি দেয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে আটকের পর রাজখোয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়

রাজশাহী সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে ব্যবসায়ীর মৃত্যু

রাজশাহী অফিস

রাজশাহীর খানপুর সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে এক গরু ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই গরু ব্যবসায়ীর নাম তাজেরুল ইসলাম (৩০)। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায়। গত শুক্রবার রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা তার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নগরীর মতিহার থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
মতিহার থানা সূত্রে জানা যায়, তাজেরুল কয়েকজন সহযোগীসহ গরু আনতে ভারত সীমান্তে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গীরা ফিরে আসতে সক্ষম হলেও তাজেরুলকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। তাজেরুলের সহযোগীরা এ খবর খানপুর বিজিবি
ক্যাম্পে জানায়। এরপর রাতে নোম্যান্সল্যান্ডে তার লাশ ফেলে রেখে যায় বিএসএফ।

ভারতীয় পত্রিকার খবর : জঙ্গি সন্দেহে ১৮ বাংলাদেশী ভারতে আটক

কূটনৈতিক রিপোর্টার

ভারতীয় জলসীমা থেকে ট্রলারসহ ১৮ বাংলাদেশীকে জঙ্গি সন্দেহে আটক করা হয়েছে বলে একটি ভারতীয় পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে।
ভারতীয় দৈনিক পত্রিকা বর্তমান-এ প্রকাশিত এই খবরে বলা হয়, গত শুক্রবার সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে বংগাদুনি দ্বীপের কাছ থেকে সোনারতরী নামের একটি ট্রলারসহ ১৮ বাংলাদেশীকে আটক করে ভারতীয় কোস্টগার্ড।
এই আটকের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গত রাতে জানান। ভারতীয় পত্রিকার খবরে বলা হয়, ট্রলারটি চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে এসে ভারতীয় জলসীমার ২৫ কিলোমিটার ভেতরে বংগাদুনি দ্বীপের কাছে ঘোরাফেরা করছিল।
এ সময় ভারতীয় জেলেরা কোস্টগার্ডের কাছে খবর পাঠায়। পরে ভারতীয় কোস্টগার্ডের একটি হোভারক্রাফট ট্রলারটিকে ১৮ জন বাংলাদেশীসহ আটক করে। এ ব্যাপারে ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসক জানান, সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে তাদের আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।