Thursday 3 June 2010

মিগ-২৯ সমাচার : ৮টির মধ্যে ৬টিই গ্রাউন্ডেড : এগুলো এখন বিমানবাহিনীর গলার ফাঁস



29/04/2010

অলিউল্লাহ নোমান
বহুল আলোচিত-সমালোচিত মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান এখন বিমানবাহিনীর গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আকাশে না উড়ে পরিণত হয়েছে বিমানবাহিনীর শো পিসে। ৮টি মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমানের ৬টি দীর্ঘদিন থেকে গ্রাউন্ডেড। জোড়াতালি দিয়ে দু’টি আকাশে উড়ানো হলেও তাতে যুদ্ধাস্ত্র নেই। মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানগুলো বাংলাদেশে আনার পর থেকেই বিপাকে পড়েছে বিমানবাহিনী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন থেকে গ্রাউন্ডেড হয়ে থাকা ৬টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান মেরামত করতে বিপুল অংকের টাকার প্রয়োজন। মেরামত করার মতো টাকা বরাদ্দ নেই বিমানবাহিনীর।
অপরদিকে প্রতিবেশী দেশ আরও উন্নত যুদ্ধবিমান তাদের বহরে জোগান দিচ্ছে। এমনকি মিয়ানমারের বিমানবহরের ১২টি অত্যাধুনিক মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আরও ২০টি মিগ-২৯। পরবর্তী ২০টি মিগ-২৯ তাদের বিমানবাহিনীর বহরে জোগান দেয়ার জন্য এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ যখন মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করে, একই সময়ে মিয়ানমারও ১২টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করে। তারা বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় অর্ধৈক দামে ১২টি মিগ ক্রয় করেছিল। তাদের সবগুলো মিগ-২৯ সচল আছে। বাংলাদেশের মিগ-২৯গুলো দীর্ঘদিন থেকেই অচল অবস্থায় গ্রাউন্ডেড। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশ অত্যাধুনিক মডেলের মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয় করলেও বর্তমানে কাজে আসছে না। এতে বিমানবাহিনীর একটি ইউনিট পুরোপুরি শক্তিহীন হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
বিমানবাহিনীর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গ্রাউন্ডেড অবস্থায় অকেজো হয়ে থাকা ৬টি বিমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে দু’টি মিগ-২৯কে কোনোরকমে সচল রাখা হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে এই দু’টি মিগও গ্রাউন্ডেড হয়ে যাবে। এতে পুরো অচল হয়ে পড়বে বিমানবাহিনীর ৫নং স্কোয়াড্রন। ৮টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান দিয়ে স্কোয়াড্রন-৫ গঠন করা হয়েছিল। মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩৭৫ ও ২৬৪ পরিচিতি নম্বরের দু’টি দুই আসনবিশিষ্ট ট্রেইনার। যার মডেল হচ্ছে ‘ইউ’। এছাড়া ৫০১, ৫০২, ৫০৩, ৫০৪, ৫০৫ ৫০৬ পরিচিতি নম্বরের ৬টি এক আসনবিশিষ্ট বিমান। এগুলোর মডেল হচ্ছে ‘বি’। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন থেকে ২০০১ সালের জুলাই পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ সরকার মিগ-২৯গুলো ক্রয় করে। মিগ-২৯গুলো পুরনো ছিল বলে তখনই অভিযোগ উঠেছিল। বিমানগুলো ক্রয় করে দেশে অনার কিছু দিন পরই ওগুলো অচল হয়ে যায়। বিমানগুলো সারানোর জন্য ২০০০ সালে রাশিয়া থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসা হয়েছিল। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়ে দিয়েছিলের পুরোপুরি কার্যক্ষমতা বা যুদ্ধোপযোগিতা ফিরে পেতে হলে ৮টি মিগ-২৯-এর ১৬টি ইঞ্জিন বদলে নেয়া দরকার। রাশিয়ান বিশেষজ্ঞরা তখন আরও জানিয়েছিলেন ইঞ্জিন না বদলালে বিমানগুলো হাইস্পিড ম্যানুভার করতে পারবে না। এছাড়া আফটার বার্নার ব্যবহারও বন্ধ রাখতে হবে। মতামত প্রদানে তখন রাশিয়ান বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, ইঞ্জিন পরিবর্তন না করলে মিগ-২৯ বিমানগুলো কার্যক্ষমতা হারিয়ে যে কোনো সময় দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর কিছুদিন পরেই সরকার পরিবর্তন হয়। এতে মেরামতের বিষয়ে আর নতুন করে কোনো চুক্তি হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার তখন ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর তত্কালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান কেনায় রাষ্ট্রের ৭০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত অপচয় ও আত্মসাতের মামলা করেছিল। মামলাটিতে চার্জ গঠনের পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে সম্প্রতি হাইকোর্ট বিভাগ পুরো মামলা বাতিল করে দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান মিগ-২৯ ক্রয় করার সময় দেশে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। অভিযোগ উঠেছিল রাশিয়া থেকে পুরনো মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান উচ্চমূল্যে ক্রয় করে আনা হয়েছে। কারণ তড়িঘড়ি করে চুক্তির মাত্র ৬ মাসের মাথায় রাশিয়া বিমানগুলো সরবরাহ করে। এত অল্প সময়ে ৮টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান তৈরি সম্ভব নয় বলে তখনই বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছিলেন। এছাড়া বিমান ক্রয়ের সময় প্রয়োজনীয় মেরামত ও খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহের চুক্তি না থাকায় দেশে আসার পর থেকেই এগুলো নিয়ে বিপাকে পড়ে বিমানবাহিনী। খুচরা যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হলে অনেক সময় বিমানবাহিনী বিভিন্ন দেশের দ্বারস্থ হয়েছে। এমনকি ভারতের দ্বারস্থও হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয় মিগ-২৯ সরবরাহকারী রাশিয়া। একপর্যায়ে ইউক্রেন ও পোল্যান্ড থেকে সেকেন্ডহ্যান্ড যন্ত্রাংশ নিয়ে আসা হয়। যা এই বিমান মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। এগুলো ব্যবহার করায় মিগ-২৯ বিমানে নানারকম যান্ত্রিক ত্রুটি আরও বাড়তে থাকে। পরে রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রকৌশলীদের দ্বারস্থ হলে তারা ভিন্ন দেশের সেকেন্ডহ্যান্ড যন্ত্রাংশ ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করেন। তারা জনিয়ে দেন, মিগ-২৯-এর মতো স্টেট অব দ্য আর্ট বা অত্যাধুনিক বিমানে পুরনো যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা ঠিক হবে না। এই অবস্থায় বিমানবাহিনী বাধ্য হয়ে অন্তত দু’টি বিমানকে সচল রাখতে ক্যানিবিলাইজেশন শুরু করে। অর্থাত্ দু’টি বিমান সচল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ বাকি ৬টি বিমান থেকে খুলে এনে ব্যবহার করতে শুরু করে। দীর্ঘদিন ধরে এই ক্যানিবিলাইজেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে দু’টি বিমানকে কোনোরকমে সচল রাখা হচ্ছে। সচল থাকা এই দু’টি বিমানের ব্যবহার উপযোগী গোলাবারুদ, মিসাইল ও বোমার সঙ্কট রয়েছে। বিমানবাহিনীর সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের সূত্রের মতে, কার্যত সচল থাকা দু’টি বিমানেরও এখন আর যুদ্ধে ব্যবহারযোগ্য নয়।
এদিকে গত জানুয়ারি ও ফেবু্রয়ারি মাসে রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট কোম্পানির টেকনিশিয়ান প্রতিনিধি দল আসে। তারা বিমানগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফেরত যায় গত মার্চে। সর্বশেষ রাশিয়ার সঙ্গে ২০০৯ সালে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের জন্য টেকনিক্যাল কো-অপারেশন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় রাশিয়ান টেকনিশিয়ানরা এসে বিমানগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যান। তবে কোনোকরমে সচল থাকা দু’টি বিমানের বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে টেকনিক্যাল কো-অপারেশন চুক্তি স্বাক্ষর হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বাকি ৬টি গ্রাউন্ডেড হয়ে থাকা মিগ-২৯-এর ভাগ্যে কি ঘটবে এই প্রশ্ন বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে। সূত্র জানায়, রাশিয়ার টেকনিশিয়ান টিম চলে যাওয়ার সময় জানিয়ে গেছে, গ্রাউন্ডেড হয়ে থাকা ৬টি মিগ-২৯কেও সচল করা সম্ভব। এক্ষেত্রে নতুন করে ইঞ্জিন মেরামতের পাশাপাশি অনেক খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হবে। কিছু পুরনো যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে হবে এবং ক্যানিবিলাইজেশনের কারণে যেসব যন্ত্রাংশ অন্য বিমানে নেয়া হয়েছে সেগুলো পুনঃস্থাপন করতে হবে। কারণ এরই মধ্যে এই বিমানগুলোর কিছু কিছু যন্ত্রাংশ খুলে সচল থাকা দু’টি বিমানে লাগানো হয়েছে। শুধু যন্ত্রাংশ আমদানি করলেই চলবে না, অচল বিমানগুলোর কোনো কোনোটিকে রাশিয়ায় পাঠাতে হবে মেরামতের জন্য। বিমানবাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের মতো শক্তিশালী বিমানও প্রয়োজন রয়েছে এই বাহিনীতে।
উল্লেখ্য, মাঝে একবার রাশিয়াকে পাশ কাটিয়ে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান মেরামতের জন্য ইউক্রেনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এতে এই যুদ্ধবিমানগুলোর প্রস্তুতকারী এবং মূল সরবরাহকারী দেশ রাশিয়ার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। অথচ আকাশে উড়তে ফিটনেস সার্টিফিকেট (আকাশে উড়তে সক্ষম কিনা) দিতে পারেন রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কর্তারা।
সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মিগ-২৯ অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান যা মার্কিন এফ-১৬-এর সমতুল্য। মার্কিন এফ-১৬ জঙ্গি বিমানের কাউন্টার পার্ট হিসেবে শোভিয়েত রাশিয়া মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান তখন তৈরি করে। রাষ্ট্রের বিপুল অংকের টাকা খরচ করে কেনা মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানগুলোকে অকেজো ফেলে রাখা হয়েছে। এই বিমানগুলো সচল না থাকায় বিমানবাহিনীর সার্বিক ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। কার্যত বিমানবাহিনীর একটি ইউনিট অচল অবস্থায় আছে।
মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয়ে দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের ৭০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছিল দাবি করে বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরো মামলা করেছিল। ২০০১ সালের ১১ ডিসেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকজনকে আসামি করে এই টাকা অপচয়ের অভিযোগে দুর্নীতির মামলাটি হয়েছিল। পরে হাইকোর্ট বিভাগে শেখ হাসিনা কোয়াশমেন্ট আবেদন করলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়। হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে বলা হয়েছিল, মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয়ে দুর্নীতির যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। এই তথ্য-উপাত্তগুলো নিয়ে নিম্ন আদালতে বিচার কার্যক্রম চলতে পারে বলে হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছিল। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন শেখ হাসিনা। তত্কালীন প্রধান বিচারপতি মোঃ রুহুল আমিনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ফুলকোর্ট শুনানি শেষে শেখ হাসিনার আপিলটি খারিজ করে দেন। এতে বহাল থাকে হাইকোর্ট বিভাগের রায়। আপিল বিভাগের রায়েও বলা হয় মামলাটিতে বিচার করার মতো যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। আপিল বিভাগের রায়ের পর বিগত জরুরি অবস্থার সরকারের সময় নিম্ন আদালতে মামলাটির বিচার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। চার্জ গঠন করা হয় শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট আসামিদের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে তখন বিদেশে অবস্থান করছিলেন। আসামির অনুপস্থিতিতে চার্জ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তখন হাইকোর্ট বিভাগে আরেকটি রিট আবেদন করেন শেখ হাসিনা। এই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি শেষে সম্প্রতি পুরো মামলাটি বাতিল করে দেয়া হয়। লন্ডনে আওয়ামী লীগ ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে দলীয় বৈঠকে যোগদানকারী বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী চার্জ গঠনে ত্রুটির কারণে পুরো মামলাটি বাতিল করে রায় ঘোষণা করেন।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/29/29662

ধর্ষণের ঘটনায় ঢাকা পলিটেকনিকে তোলপাড় : ধর্ষক দুই ছাত্রলীগকর্মী বহিষ্কার

28/04/2010
স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে প্রথমবর্ষের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ গতকাল বিভাগীয় প্রধানসহ শিক্ষকদের নিয়ে সভা করে ধর্ষক ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। দুদিন গত হলেও থানা পুলিশ এখনও কোনো মামলা নেয়নি। আসামিরা ইন্সটিটিউট এলাকায় এক প্রকার প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এদিকে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশিত হওয়ায় সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সাধারণ ছাত্রীরা ধর্ষক দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার ও উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছে। গত রোববার দিনদুপুরে তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ক্লাসরুমে প্রথমবর্ষের ছাত্রীকে ছাত্রলীগের জাকির গ্রুপের সদস্য মোবারক হোসেন ও অমিত ধর্ষণ করে। ছাত্রীর চিত্কারে ইনস্টিটিউটে শিক্ষকরা ছুটে আসেন। ছাত্রীকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করে শিক্ষকদের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাত্রীটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিক্ষকদের কাছে তার করুণ পরিণতির কথা জানায়। উপস্থিত শিক্ষকরা এ ঘটনা শুনে হতভম্ব হয়ে যান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা করে তারা বিষয়টিকে গোপন রাখেন। কিন্তু এ ঘটনা আস্তে আস্তে ছাত্র-ছাত্রীদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষকরা এনিয়ে জরুরি সভা আহ্বান করেন। গতকাল শিক্ষকদের জরুরি সভায় ছাত্রলীগে দুই ক্যাডার ইন্সটিটিউটের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র মোবারক হোসেন ও তার সহযোগী একই বর্ষের অমিতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই দুই ধর্ষক যাতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর ভর্তি হতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যদি তারা কোথাও ভর্তি হতে যায় তাহলে তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে এ ঘটনায় ইন্সটিটিউটের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ভয়ে কোনো ছাত্র-ছাত্রী এ ঘটনায় প্রতিবাদও করতে পারেনি। তারা সন্ধিহান যে, এ ঘটনার বিচার কর্তৃপক্ষ আদৌ করতে পারবে কিনা? গতকাল ইনস্টিটিউট এলাকায় গিয়ে থমথমে পরিস্থিত লক্ষ্য করা যায়। সাধারণ ছাত্ররা যাতে মিছিল না করতে পারে সেজন্য ছাত্রলীগ ক্যাডাররা কড়া নজর রাখছে।
অপরদিকে দুদিন গত হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ দুই ধর্ষককে গ্রেফতারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। গতকাল পর্যন্ত থানায় কোনো মামলাও দায়ের হয়নি। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, ভিকটিম বা অন্য কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ না করার কারণে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। মামলা হলে তিনি আইনানুগ কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। তবে ঘটনাটি তিনি শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, লোকলজ্জার কারণে ধর্ষিতা মেয়ের পক্ষে এখনও কোনো অভিযোগ জানানো হয়নি। ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে মামলা করার বিষয়েও গতকাল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি। শুধু বলেন, দোষী দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/28/29522

চুনারুঘাটে আ’লীগ : নেতার হামলায় সাংবাদিক হাসপাতালে



28/04/2010
হবিগঞ্জ ও চুনারুঘাট প্রতিনিধি
সংবাদ প্রকাশের জের ধরে নিউ নেশন ও হবিগঞ্জ সমা-চার পত্রিকার হবিগঞ্জের চুনা-রুঘাট প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান তাহের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। সন্ত্রাসীরা তার ভিডিও ক্যামেরা, স্টিল ক্যামেরা, দুটি মোবাইল সেট ও টাকা নিয়ে গেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহেরের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তাকে আক্রমণ করে। জানা গেছে, সোমবার বিকেলে মনিরুজ্জামান তাহের চণ্ডিছড়া চা-বাগান থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে মোটরসাইকেলে চুনারুঘাট সদরে ফিরছিলেন। তিনি দেওরগাছ এলাকায় আসামাত্র ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তার গতিরোধ করে এবং হামলা চালায়। তার চিত্কারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে তাকে রক্ষা করে। খবর পেয়ে চুনারুঘাট থানার এএসআই হরিদাশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। চিকিত্সকরা তাকে হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালে রেফার করেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মনিরুজ্জামান তাহের জানান, আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহেরের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তার ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা তার একটি ভিডিও ক্যামেরা, একটি স্টিল ক্যামেরা, দুটি মোবাইল সেটসহ নগদ টাকা লুটে নেয়।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ ফারুক আহমেদ খান জানান, সাংবাদিক তাহেরকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। কারা হামলার সঙ্গে জড়িত এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে হামলাকারীদের পায়নি।
মনিরুজ্জামান তাহেরের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন চুনারুঘাট প্রেসক্লাব নেতারা। তারা হামলাকারীদের শাস্তির দাবি করেন।
এদিকে চুনারুঘাট প্রেসক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক মনিরুজ্জামান তাহেরের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল চুনারুঘাট প্রেসক্লাবে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সাংগঠনিক সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাবেক সভাপতি ফারুক উদ্দিন চৌধুরী, মোঃ সিরাজুল হক, মোঃ নুরুল আমিন, মোঃ হাছান আলী, মোঃ কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, জামাল হোসেন লিটন, ইসমাইল হোসেন বাচ্চু, মহিদ আহমেদ চৌধুরী, মোস্তাক আহমেদ তরফদার, রাইরঞ্জন পাল, জুনায়েদ আহমেদ, এসএম তাহের খান, দুলাল মিয়া প্রমুখ। সভায় হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের সাংবাদিকদের জানান, হামলার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়ানো হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত রোববার হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকায় ‘চান্দপুর চা-বাগানে ওজনে কম ও নিম্নমানের রেশন দেয়ায় শ্রমিকদের ক্ষোভ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হন চেয়ারম্যান আবু হাতের।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/28/29510