Friday 31 December 2010

সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা নীরব ভূমিকায় : ভারতীয় লোকজন বাংলাদেশে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে



হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি

ভারতীয় লোকজন বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে খর্প নদী থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তা দেখেও বিজিবি (বিডিআর) কোনো প্রতিবাদ করছে না। অথচ বাংলাদেশী লোকজন সীমান্তবর্তী ওই নদীতে মাছ ধরতে গেলে ভারতীয় বিএসএফ মারমুখী হয়ে বাধা দিচ্ছে। মাছ ধরতে গিয়ে গত ৭ দিনে বিএসএফের গুলিতে ২ বাংলাদেশী নিহত হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোলাপাড়া, সিঙ্গিমারী, বড়াইপাড়া, গেন্দুকুড়ি, দইখাওয়া, আমঝোলসহ গোটা জেলার সীমান্তে খর্প নদীর অবস্থান। ওই নদীর পশ্চিম ও দক্ষিণ তীর বাংলাদেশী ভূখণ্ড এবং পূর্ব ও উত্তর তীর ভারতীয় ভূখণ্ড। বাংলাদেশী লোকজন সীমান্তে মাছ ধরতে গেলে বিএসএফ বাধা দেয় এবং অস্ত্র উঁচিয়ে তেড়ে আসে। অপরদিকে ভারতীয় লোকজন বিজিবির সামনেই বাংলাদেশী ভূখণ্ডে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতে বিজিবি বাধা দিচ্ছে না—এমন অভিযোগ সীমান্তবাসীর। সীমান্তবর্তী লোকজন অভিযোগ করেন, আমরা আমাদের জমিতে মাছ ধরতে বা ঘাস কাটতে গেলে বিএসএফের পাশাপাশি ভারতীয় লোকজনও বাধা দেয়। বিএসএফ অস্ত্র উঁচু করে গুলির হুমকি দিলে আমরা ভয়ে পালিয়ে আসি। অথচ ভারতীয় লোকজন বাংলাদেশী বিওপি ক্যাম্পের কাছে এসে মাছ ধরে ও ঘাস কেটে নিয়ে গেলেও কিছুই করে না। বিষয়গুলো বিজিবিকে জানানো হলেও কোনো কাজ হয়নি। গত শুক্রবার সকালে গোতামারী গ্রামের গোলাম মোহাম্মদের ছেলে সাইফুল ইসলাম দইখাওয়া সীমান্তে মাছ ধরতে গেলে ভারতীয় বড় মরিচা ক্যাম্পের বিএসএফ বাংলাদেশে ঢুকে তাকে গুলি করে হত্যা করে। এর দু’দিন পর বুড়িমারী সীমান্ত এলাকা থেকে বিএসএফ আলতাব হোসেনের ছেলে বেলাল হোসেন নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে। এ ব্যাপারে লালমনিরহাট বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আসলাম জানান, বিএসএফ গত ৭ দিনে ২ বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করে। ভারতীয় লোকজন বাংলাদেশে প্রবেশের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা কোনো ছাড় দিতে রাজি নই

কংগ্রেস প্রকাশিত বইয়ের তথ্য : বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পেছনে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোই দায়ী

সফিকুল ইসলাম, কলকাতা

কংগ্রেসের ১২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত পুস্তিকা ‘কংগ্রেস অ্যান্ড দ্য মেকিং অফ দ্য ইন্ডিয়ান নেশনস’-এ বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও সেই সময়কার কার্যকলাপের জন্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ, বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদকেই দায়ী করা হয়েছে, তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাওয়ের ভূমিকাকে লঘু করে দেখানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সম্পাদনা করা বইয়ে লেখা হয়েছে ১৯৮০ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রচারে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার ডাক এবং সেস্থানে রামমন্দির করার আহ্বান জানানো হয়। এরপর বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানীর রাম রথযাত্রায় দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ায়। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ডাকে এক সমাবেশে উত্তর প্রদেশের তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং প্রথম উত্তেজক ভাষণ দেন। এরপর এলকে আদভানী, উমা ভারতী, মুরলী মনোহর যোশীর মতো বিজেপি নেতাদের বক্তব্য রাখার মধ্য দিয়ে এমন উত্তেজনা ছড়ায় যে, ‘করসেবক’ নামধারী উগ্র হিন্দুরা শাবল, গাইতি ইত্যাদি নিয়ে মসজিদের মিনারসহ অন্যান্য স্থানে উঠে পড়ে এবং মসজিদকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। বইয়ে লেখা হয়েছে, সুপ্রিমকোর্ট বলেছিল, মসজিদ সুরক্ষার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং সে দায়িত্ব পালনের কথা দিলেও তিনি তা পালন করেননি। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধে এবং প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও ১৯৯২ সালের ৭ ডিসেম্বর দেশের সব সাম্প্রদায়িক সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন বলে পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। পুস্তিকাটিতে রাজীব গান্ধীর প্রশংসা করা হলেও তার ভাই সঞ্জয় গান্ধীর নিন্দা করা হয়েছে। দেশে জরুরি অবস্থার মূল্যায়ন করতে গিয়ে স্বীকার করা হয়েছে, ওই সময়ে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব হয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপ তো বটেই বিচার ব্যবস্থাও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও খর্ব করা হয়েছিল। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধী সীমাহীন ক্ষমতা ভোগ করেছিলেন বললেও সমালোচনার প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিলেন তার পুত্র সঞ্জয় গান্ধীই। পরিবার পরিকল্পনা থেকে বস্তি উচ্ছেদ তার স্বৈরাচারী মনোভাবের কথাই খোলাখুলি স্বীকার করেছে কংগ্রেস। আত্মসমীক্ষার ওই বইয়ে বোঝানো হয়েছে ক্ষমতার উত্স ছিলেন সঞ্জয়ই। কংগ্রেসের এই মূল্যায়নে মোটেই সন্তুষ্ট নয় বিজেপি। তাদের বক্তব্য, নিজেদের ভুল অন্যের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন প্রণব মুখার্জিরা।
প্রসঙ্গত, প্রয়াত সঞ্জয় গান্ধীর স্ত্রী মানেকা গান্ধী ও পুত্র বরুণ এখন বিজেপির সংসদ সদস্য। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সঞ্জয়কে এবং বাবরি মসজিদ ইস্যুতে নেতাদের ভূমিকা কি আড়াল করতে চাইছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন কংগ্রেসের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন।

টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে আসামে বিক্ষোভ



শফিকুল ইসলাম, কলকাতা

মনিপুরের টিপাইমুখ বরাক নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বুধবার আসামের শিলচরে বিশাল মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নরসিংহটোলা মাঠে সমাবেশের পর বের হয় মিছিল। প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা এক স্মারকলিপি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিসি নাথের কাছে পেশ করা হয়। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্মারকপত্র পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় শক্তিমন্ত্রী এবং আসাম ও মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সমাবেশ ও মিছিল কার্যসূচির আয়োজক কমিটি আন পিপলস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (কোপ) এবং সোসাইটি অব অ্যাকটিভিস্টস ফর ফরেস্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সেফ)। এই ইস্যুতে একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মসূচিতে অংশ নেয় বরাক ভ্যালি ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস অব ইয়ুথ অর্গানাইজেশন, বরাক ভ্যালি স্টুডেন্টস ফ্রন্ট অল আসাম ট্রাইবাল সংঘ, অল বরাক স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতি সংগঠনের কর্মকর্তারাও। অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন মনিপুরী মহিলা।
কোপ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পীযূষ কান্তি দাস এবং সেফ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জিষ্ণু দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, রবাক নদীর ওপর টিপাইমুখে ১৮০ মিটার উঁচু বাঁধ নির্মিত হলে তা বৃহত্তর অঞ্চলের পরিবেশে বিরাট প্রভাব ফেলবে। প্রস্তাবিত বাঁধকে তারা ওয়াটার বোম্ব বলে অভিহিত করে।
তারা বলেন, উজানে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে এতে ভাটি অঞ্চলের কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, সরকার তা একবারও ভেবে দেখেনি। অথচ প্রস্তাবিত বাঁধ বরাক উপত্যকার অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলবে। জীববৈচিত্র্য চরম বিঘ্নিত হবে। তারা পানি সঙ্কট, শস্য ক্ষেতের ওপর বিরূপ প্রভাব, নৌচালনার সমস্যা, নদী দূষণ ইত্যাদি আশঙ্কার কথাও তুলে ধরেন

Wednesday 29 December 2010

সিলেট সীমান্তে আড়াইশ’ কি.মি. কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ভারতের : করিমগঞ্জে ১৪৪ ধারা : নতুন বছরের শুরুতে সীমান্ত জরিপ

এটিএম হায়দার সিলেট

বৃহত্তর সিলেট সীমান্তে প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শেষ করেছে ভারত। আরও ১২২ কিলোমিটার বেড়া নির্মাণ চলছে। এমনকি কাঁটাতার থাকাবস্থায়ও করিমগঞ্জ সীমান্তে রাতকালীন ১৪৪ ধারা জারি রেখেছে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। চোরাকারবার রোধ ও বাংলাদেশ থেকে কথিত অনুপ্রবেশ রোধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে ভারতীয় পত্রিকায় বলা হয়েছে। এদিকে স্থগিত হয়ে যাওয়া ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত জরিপ নতুন বছরে শুরু হচ্ছে। রোববার বিকালে সিলেটের জেলা প্রশাসক পদুয়া সীমান্ত ঘুরে গেছেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কেবল আসাম ও মেঘালয়ে ৫৭০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ২৫০ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শেষ করেছে ভারত। এছাড়া ১২২ কিলোমিটারের বেড়া নির্মাণের কাজ বর্তমানে চলছে। সীমান্তের ১৩০ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়নি, যার বেশিরভাগ মেঘালয়ের জৈন্তা হিলস ডিস্ট্রিক এলাকায়। বর্তমানে এ এলাকা সীমান্তে ভূমির জরিপ কাজের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিএসএফের আসাম-মেঘালয় ফ্রন্টের ইন্সপেক্টর জেনারেল আরসি সাক্সেনা সম্প্রতি শিলংয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ এক বছরে ৪৫ লাখ ৪৩ হাজার ভারতীয় রুপির গরু, গাঁজা, কাঠসহ আটক করেছে। এছাড়া তিনি ভারতের বিভিন্ন সংগঠনের ৪২ উগ্রপন্থীকে আটক, ২ অস্ত্র ব্যবসায়ী, ৫০ লাখ রুপির ব্রাউন সুগার আটকের তথ্য দেন। এদিকে সিলেটের জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার
উপজেলার বিপরীতে আসামের করিমগঞ্জ জেলায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ১৪৪ জারি করেছে প্রশাসন। ভারতীয় পত্রিকার খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশ থেকে ভারতে উগ্রপন্থীদের প্রবেশ, চোরাকারবার রোধসহ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এক আদেশ জারি করে ভারত-বাংলা সীমান্তে রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ১০০ মিটার এলাকায় চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। করিমগঞ্জের ভাঙ্গা থেকে সরিষা পর্যন্ত এলাকা জাতীয় সড়কের পার্শ্ববর্তী সীমান্ত সংলগ্ন ২০০ মিটার এলাকা এবং কারখানা পুতনী থেকে লাফাশাইল পর্যন্ত সীমান্ত সংলগ্ন ৫০০ মিটার এলাকায় চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন কুশিয়ারা নদী ও তার তীরের ক্ষেত্রে একই আদেশ বলবত্ থাকবে। এছাড়া রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত লক্ষ্মীবাজার, টিলাবাজার, চুরাইবাড়ি, কুকিতল, চাঁদখিরা, আদমটিলা, মোকামটিলা, বিলবাড়ি, ফকিরবাজার থেকে লাতু-মহিশাসন পূর্ত বিভাগের সড়কেও যান চলাচল করতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীতে দেশি নৌকা নিয়ে চলাচল করতে পারবে না। এমনকি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ৫০০ মিটার এলাকায় গবাদিপশু নিয়ে চলাচল করতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় চাল, চিনি, মদ, কাপড়, সুপারি, তেল, বাঁশ, কাঠ নিয়ে চলাচল করতে পারবে না। তবে করিমগঞ্জ শহর এলাকায় এ আদেশ বলবত্ থাকবে না। অনুপ্রবেশ ও চোরাকারবার রোধে জেলা প্রশাসন এ আদেশ জারি করেছে।
অপরদিকে সিলেট সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশ সীমানা জরিপ নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে শুরু হতে পারে। ভারতে মেঘালয় রাজ্যের বিপরীত সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পদুয়া এবং জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবিবিল ও কেন্দ্রীয় হাওরে বিরোধপূর্ণ ভূমির জরিপ বিভিন্ন কারণে স্থগিত রয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসক আবু সৈয়দ মোহাম্মদ হাশিম রোববার বিকালে গোয়াইনঘাটের পদুয়া সীমান্ত পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে বিরোধপূর্ণ ভূমি নিয়ে বিজিবি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন।
উল্লেখ্য, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের প্রতাপপুরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত ঘটনাবহুল পদুয়া গ্রামের ২৩০ একর ভূখণ্ড ভারত জোরপূর্বক নিজেদের দখলে রেখেছে। আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার বিরাজমান অবস্থায় ভারত কর্তৃক জোরপূর্বক বেদখলে রাখা এই জমি গত ২৯ বছর ধরে বাংলাদেশের হাতছাড়া রয়েছে। সীমান্ত জরিপে পদুয়া ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ আশঙ্কা থেকে জরিপ চলাকালীন গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভারতীয় নাগরিক ও বিএসএফ সীমান্তে হাঙ্গামা সৃষ্টি করে। চলতি মাসের ৭ তারিখ দুই দেশের ভূমি সার্ভে কমিশনের যৌথ বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে সীমান্তের ভূমি জরিপ শুরু হয়। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে মেঘালয়-সিলেট সীমান্তের জরিপ শেষ হওয়ার কথা।

বুড়িমারী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী নিহত

লালমনিরহাট ও পাটগ্রাম প্রতিনিধি

হাতিবান্ধার দইখাওয়া সীমান্তে শুক্রবার বাংলাদেশী যুবক হত্যার তিনদিনের ব্যবধানে গতকাল ভোর সাড়ে ৫টায় লালমনিরহাটের বুড়িমারী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বেলাল হোসেন (২৫) নামের আরও এক বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। এ সময় বাবু নামের আরও এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে পাটগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত বেলাল হোসেনের লাশ বিএসএফ সদস্যরা টেনেহিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে গেছে। তিনি পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বামনদল গ্রামের আফসার আলীর ছেলে। এদিকে বাংলাদেশী যুবককে গুলি করে হত্যা ও লাশ টেনেহিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সীমান্তে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। গুলি করে যুবক হত্যা ও অন্য একজনকে গুলি করে আহত করার ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত যুবকের লাশ ফেরত না দেয়ায় ওই সীমান্তে বিজিডি-বিএসএফ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া বিনা উস্কানিতে বিএসএফের হাতে একের পর এক বাংলাদেশী হত্যার ঘটনায় সীমান্তবাসীরা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বিজিবি সূত্র জানায়, গতকাল ভোর সাড়ে ৫টায় পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী সীমান্তের ৮৩৮ নম্বর মেইন পিলার সংলগ্ন এলাকায় ভারতের ১০৪ বিএসবাড়ি ব্যাটালিয়নের বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশ অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশী যুবক বেলালকে লক্ষ্য করে পরপর ৭ রাউন্ড গুলি চালায়। এতে বেলাল নিহত এবং বাবু নামের অন্য একজন আহত হন। একপর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা তার লাশ টেনেহিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর শফিক জানান, বিএসএফের গুলিতে নিহত বেলাল ও আহত বাবু গরু আনতে ভারতে যাওয়ার সময় বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে পরপর ৭ রাউন্ড গুলি চালায়। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণের কারণে বেলাল হোসেন ঘটনাস্থলেই মারা যান। বিএসএফ সদস্যরা আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে তার লাশ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। লাশ ফেরত চেয়ে গতকাল সকাল ১০টায় বিশেষ দূত মাধ্যমে ১০৪ বিএসবাড়ি বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে বিএসএফের পক্ষ থেকে লাশ ফেরতের ব্যাপারে কোনো সাড়া মেলেনি।

আসামে টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচি

শফিকুল ইসলাম, কলকাতা

টিপাইমুখ বাঁধের বিরোধিতা করে আসামের শিলচরে আগামী মঙ্গলবার এক বিশাল মিছিল করার কর্মসূচি নিয়েছে কমিটি অন পিপলস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সংক্ষেপে কোপ। প্রস্তাবিত এই বৃহত্ নদীবাঁধ বিরোধী মিছিলে এ অঞ্চলের প্রতিটি দল, সংগঠনসহ ব্যক্তি বিশেষকেও অংশ নিতে কোপ এক বিবৃতিতে আবেদন জানিয়েছে। তাদের দাবি, টিপাইমুখ নদী বাঁধের বিরুদ্ধে এই মিছিল-সমাবেশ সম্পর্কে জনসাধারণের কাছ থেকে এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে।
টিপাইমুখে প্রস্তাবিত এই বাঁধের বিপদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে কোপ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘প্রস্তাবিত বাঁধের বহুবিধ ক্ষতির কথা ভেবে একদিকে বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ, সমাজকর্মীরা যেমন প্রতিবাদে সরব হয়েছেন, তেমনি এই অঞ্চলের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশেল জনতা, সংস্থা, সংগঠনও প্রতিবাদ-আন্দোলন করছে। এই বাঁধসহ বৃহত্ নদীবাঁধের বিরুদ্ধে এই ভূখণ্ডসহ অন্য এলাকায়ও আন্দোলনের সমুদ্রকল্লোল ক্রমে তীব্রতর হচ্ছে। মানবসভ্যতার পক্ষে সর্বনাশী বৃহত্ নদীবাঁধের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশের আন্দোলন আর চিন্তা-ভাবনা থেকে আমরা নিজেদের বিছিন্ন রাখতে পারি না। আমরাও তাদের চিন্তার সহযাত্রী ও আন্দোলনের অংশীদার।’
কমিটি অন পিপলস অ্যান্ড এনভায়রন-মেন্ট আরও বলেছে, টিপাইমুখের জলবোমাতুল্য বিশাল এই ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য আর ১৮১ মিটার উচ্চতার প্রস্তাবিত বরাক বাঁধ ভাটি বরাকের শিয়রে আক্ষরিক অর্থেই সর্বক্ষণের সমন। অতি স্পর্শকাতর ভূমিকম্প অঞ্চল পাঁচের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় মাটি ভরাট পদ্ধতির এই প্রায় ষাটতলা উঁচু বাঁধ কোনো কারণে ভেঙে গেলে বরাক-সুরমার অস্তিত্ব চিল-কাকেরাও খুঁজে পাবে না। সুরমা-বরাকের ইতািস-ঐতিহ্য সব বিলীন হয়ে যাবে। ধুয়েমুছে বিশাল এই জনপদ এক কবরস্থান বা শ্মশানভূমিতে পরিণত হবে। বাঁধের উজান এলাকায় আবহামনকাল ধরে বসবাস করে আসা মার-মনিপুরী-নাগা-কুকি ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর মানুষদের ছিন্নমূল হতে হবে। ইন্দো-বার্মা, ইন্দো-মালয় আর ইন্দো-চীন জীববৈচিত্র্য মানচিত্রের এই অঞ্চলে বিদ্যমান বিরল আর বিলুপ্তপ্রায় বহু জীববৈচিত্র্য বিলীন হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে শত শত গাছ-গাছড়া আর জানা-অজানা পাখি-প্রাণীর কলকাকলি। বর্ষা বৃষ্টিতে বন্যার তোড় বাড়বে আবার শীতে থাকবে না পানি। মূল নদীর বুক শুকিয়ে যাওয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী সমতল এলাকার ছোট-বড় সব নদী-নালা, খাল-বিল-পুকুর-ডোবায় পানি থাকবে না। পানির মাত্রা কমে যাওয়ায় বরাক নদী থেকে বহু প্রজাতির মাছ নিশ্চিহ্ন হবে।
টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধী সংস্থার দাবি, এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি যাদের বিপন্ন হতে হবে, সেই বরাক উপত্যকার আমজনতা কোনোভাবেই চুপ থাকবে না। সংগঠিত হয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ করবেই তারা।

বাংলাদেশকে শতকোটি টাকা ঠকিয়ে ওয়ারিদ কিনেছে এয়ারটেল : দেশের টেলিকম খাতকে ভারতীয়করণের চক্রান্ত চলছে

জিয়াউদ্দিন সাইমুম

শুরুতেই বাংলাদেশকে শতকোটি টাকা ঠকিয়ে ওয়ারিদ টেলিকম কিনেছে ভারতী এয়ারটেল। অন্যদিকে ওয়ারিদ টেলিকম কেনার মাধ্যমে শুধু ভারতী এয়ারটেলই সুবিধা পায়নি, টেলিকম খাতে নতুন চাকরি সৃষ্টির নামে ভারত বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় টেলিকম খাতকে ভারতীয়করণেরও সুযোগ পেয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রান্সপোর্ট, গার্মেন্ট, ইলেকট্রনিক্স, ওষুধ, খাদ্যপণ্য, পানীয়সহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ থাকলও টেলিকম সেক্টরে এটাই প্রথম। এদিকে বছরশেষে বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়বে বৈ কমবে না। আর এয়ারটেল সে ঘাটতির ব্যবধান আরও বাড়িয়ে দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
অভিযোগ রয়েছে, ভারতকে এ সুযোগটি করে দেয়ার পেছনের ব্যক্তি দু’জন হচ্ছেন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহাম্মেদ রাজু এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ। কারণ ওয়ারিদ টেলিকমের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে এ দু’জন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ওয়ারিদের মোট মূল্য ১ কোটি টাকা দেখিয়ে মাত্র ৭০ লাখ টাকার বিনিময়ে ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ ভাগ শেয়ার কিনে নেয়ার সুযোগ করে দেন এয়ারটেলকে। তবে টেলিকম বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এর পেছনে প্রশাসনের বড় কোনো কর্মকর্তার পরোক্ষ মদত থাকতে পারে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১-এর ধারা ৩৭(১) অনুসারে বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স পাওয়া কোনো কোম্পানি অন্য কোনো কোম্পানির কাছে লাইসেন্স বিক্রি করতে পারবে না; কিন্তু ৩৭(৩)-এর ঝ উপধারা অনুসারে শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবে। এই শেয়ার হস্তান্তরের সময় শেয়ারমূল্যের ৫.৫ ভাগ বিটিআরসিকে দিতে হবে। ওয়ারিদের ৭০ ভাগ শেয়ারের মূল্য ৩০ কোটি টাকা দেখালে এর ৫.৫ ভাগ অর্থাত্ ১১৫.৫ কোটি টাকা বিটিআরসিকে দিতে হতো। কিন্তু ৭০ শতাংশ শেয়ারের দাম নামমাত্র ৭০ লাখ টাকা দেখানোর কারণে দিতে হয়েছে ৭০ লাখ টাকার ৫.৫ ভাগ অর্থাত্ মাত্র ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে—এই আশঙ্কায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় পরবর্তী সময়ে এ আইনটিই পরিবর্তন করে ফেলে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির নামে সবচেয়ে বেশি শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে ওয়ারিদ টেলিকম লিমিটেড, যা এখন এয়ারটেলের নামে চলছে। এক তথ্যে দেখা গেছে, ঢাকা কাস্টমস হাউস দিয়ে আমদানি করা ১৫টি চালানে ওয়ারিদ টেলিকম এ পর্যন্ত ৬৯ কোটি ৬২ লাখ ৬৮ হাজার টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমদানি চালান আটক করে পুনরায় কায়িক পরীক্ষা করা হলে মিথ্যা ঘোষণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের শুল্ক ফাঁকির ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়। পরে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হলে শুনানির পর ঢাকা কাস্টমস কমিশনারের বিচারাদেশে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এর বিরুদ্ধে ওয়ারিদ কাস্টমস আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেছে বলে জানা গেছে।
গত ২০ ডিসেম্বর হয়ে গেল এয়ারটেলের লোগো উন্মোচন তথা খোলস পরিবর্তন পর্ব। নতুন স্লোগান ‘ভালোবাসার টানে, পাশে আনে’ নিয়ে তাদের লক্ষ্য ২০১৫ সালের মধ্যে এয়ারটেলকে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যবহারকারীর ভালোবাসাসিক্ত ব্র্যান্ডে পরিণত করা।
ওয়ারিদের যাত্রা শুরু হয়েছিল পহেলা বৈশাখে। এদেশের সংস্কৃতি ও লৌকিকতা তুলে ধরে চিত্রায়িত বাপ্পা মজুমদারের ‘সালাম বাংলাদেশ’ গানের মাধ্যমে। কিন্তু এয়ারটেলের প্রথম বিজ্ঞাপনটি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তো নয়ই, বরং বিজ্ঞাপনটি দেখে যে কারও ধারণা হতে পারে, এটি ভারতে চিত্রায়িত এবং ভারতীয় মডেল দ্বারা অভিনীতও বটে। ইউনিলিভারের কল্যাণে ইতোমধ্যেই দেশীয় চ্যানেলে ভারতীয় নায়ক-নায়িকাদের মুখশ্রী দেখা যাচ্ছে। শাহরুখ খানের পদধূলির সুবাদে ডেসটিনির চ্যানেল বৈশাখী একমাস অনবরত হিন্দি গানের আসর বসিয়েছিল। এখন সেই যাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে এয়ারটেল।
এয়ারটেল শুধু ভারতীয় মডেল দিয়ে বিজ্ঞাপন করেই ক্ষান্ত থাকেনি, তাদের লঞ্চিং বোনাঞ্জার প্রথম পুরস্কার হিসেবে তারা রেখেছে বলিউড সেলিব্রেটি জুটি সাইফ এবং কারিনার সঙ্গে ডিনারের সুযোগ। দৈনিক আমার দেশ-এর একজন পাঠকের ভাষায়, ‘ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বাদে অন্য কোনোভাবে ব্যাপারটিকে নিতে পারলাম না।’
এয়ারটেল শুরুতেই ঘোষণা দিয়েছে তারা বাংলাদেশে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। কিন্তু টেলিকরিডোর নিয়ে এয়ারটেলের দৌড়ঝাঁপ দেখে এ খাতের বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা হচ্ছে, এয়ারটেল বাংলাদেশের বিকাশমান টেলিকম খাতকে ভারতীয়করণের চেষ্টা করছে।

সিলেট সীমান্তে ভূমি জরিপ : বাংলাদেশের ৫৫ একর জমির মালিকানা দাবি ভারতীয়দের

এটিএম হায়দার, সিলেট

সিলেট সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার ভূমি জরিপ প্রক্রিয়া বিভিন্ন কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। গতকাল সোমবার কোথাও জরিপ অনুষ্ঠিত হয়নি। মেঘালয়ে বড়দিনের উত্সব, বাংলাদেশে গত সপ্তাহের ছুটি ছাড়াও মাঠপর্যায়ে সৃষ্ট কিছু সমস্যার কারণে চলতি সপ্তাহে নতুন করে জরিপ কাজ শুরু হচ্ছে না বলে একাধিক সূত্রের সঙ্গে আলাপ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
একটি সূত্র মতে, সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবির হাওর ও কেন্দ্রীবিলে ৫৫ একর জমি জরিপ শুরু না হতেই ভারতীয়রা সেগুলোর মালিকানা দাবি করে বসেছে। ওদিকে গোয়াইনঘাটের পদুয়ায় ভারতীয়দের হাঙ্গামা সৃষ্টির কারণে সিলেট-মেঘালয় সীমান্তে দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত জরিপের বিষয়টি এখন কিছুটা ঝুলে গেছে। কবে নাগাদ এখানে জরিপ শুরু হবে, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের জরিপ দলে দায়িত্ব পালনরত সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ড. মো. আবুল হাসান বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জরিপ কাজে উত্থাপন করা হয়েছে। ভারতীয়দের কাছেও তাদের কোনো ডকুমেন্ট থাকলে তা উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। কোনো অযৌক্তিক দাবি নিয়ে এলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি বলেন, মেঘালয়ে ক্রিসমাসের কারণে কয়েক দিন জরিপ বন্ধ রাখার জন্য তারা অনুরোধ জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের ভূমি রেকর্ড সার্ভে কমিশন গত ২৯ নভেম্বর তামাবিল সীমান্তে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বিরোধপূর্ণ ভূমির জরিপ শুরুর সিদ্ধান্তে ঐকমত্য হয়। সে মোতাবেক ৭ ডিসেম্বর গোয়াইনঘাট উপজেলা ভূমি অফিসের লোকজন প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে ৮ ডিসেম্বর মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু করেন। জরিপ চলাকালে জৈন্তাপুরের ডিবিবিলে ভারতীয়রা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভূমির মালিকানা দাবি এবং পদুয়ায় ভারতীয়দের উসকানিমূলক আচরণ জরিপকাজ ব্যাহত করেছে। তবে কানাইঘাটে সমস্যা ছাড়াই জরিপ সম্পন্ন হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুই দেশের জরিপ দলের গোয়াইনঘাটের পদুয়া ও জৈন্তাপুরের ডিবির হাওর কেন্দ্রীবিলে জরিপ শুরুর কথা থাকলেও তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে দেখা যায়নি। কী কারণে জরিপ শুরু হচ্ছে না, সে সম্পর্কে বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আগের সপ্তাহে জরিপ চলাকালে জৈন্তাপুর-মুক্তাপুর সীমান্তে ডিবির হাওর কেন্দ্রীবিলে ৫৫ একর জমি ভারতীয়রা নিজেদের বলে দাবি করায় জরিপ স্থগিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়টি উভয় দেশের জরিপ দল নিজ নিজ দেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছে বলে জানা গেছে। ভারতীয় একটি পত্রিকায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশী নাগরিকদের বাড়াবাড়ির কারণে পদুয়া ও মুক্তাপুরে জরিপ কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে সিলেটে ২১ রাইফেলসের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল খায়রুল কাদিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে বিডিআর বা বাংলাদেশী নাগরিকদের বাধা প্রদানের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, বিডিআর জরিপে অংশ নিচ্ছে না। জরিপ দলের সীমান্ত অতিক্রম ও তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু বিডিআর দেখে আসছে। জৈন্তিয়া শেকড় সন্ধানী গ্রুপের সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় নাগরিকদের ‘মামা বাড়ির আবদার’ রক্ষা না হওয়ায় সিলেটে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত জরিপের বিষয়টি স্থগিত হয়ে গেছে। গত ১৪ ডিসেম্বর জরিপ শুরুর আগেই ভারতের মেঘালয়ের মুক্তাপুর থানার লোকজন সমবেত হয়ে বাংলাদেশের ৫৫ একর জমি তাদের বলে দাবি জানাতে থাকে। এমনকি তারা এই জমি তাদের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানায়। বাংলাদেশ জরিপ দল তাদের এই আবদারে সাড়া না দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার থেকে যথারীতি জরিপ পরিচালনায় অনড় মনোভাব দেখায়। ফলে দুই দেশের জরিপ দলের ঐকমত্য না হওয়ায় তা স্থগিত হয়ে যায়। দুই দেশই তাদের ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি জানায় বলে ভারতীয় পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে। একটি ভারতীয় পত্রিকায় মুক্তাপুর-জৈন্তাপুর সীমান্তে জরিপ না হওয়ার জন্য সরাসরি বাংলাদেশের বাসিন্দাদের অভিযুক্ত করে। পত্রিকায় বলা হয়, ভারতের ১৩ সদস্যের জরিপ দল জৈন্তিয়া হিল ডিস্ট্রিক্টের মুক্তাপুর থানার কামপ্লিইং নদীতে সার্ভের জন্য বর্তমানে জরিপ শুরুর অপেক্ষা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রতাপপুর-পদুয়ায় দুই দেশের সীমান্ত জরিপে বাংলাদেশ পক্ষে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব ড. মো. আবুল হাসান এবং ভারতীয় মেঘালয়ের জরিপ বিভাগের সহকারী পরিচালক এ সাম পিয়াং জরিপ কাজে নেতৃত্ব দেন। যৌথ জরিপ দল গোয়াইনঘাটের পদুয়ার ১২৭০ নম্বর সীমান্ত পিলার থেকে ১২৭১ নম্বর পিলার পর্যন্ত স্থানে জরিপ পরিচালনা করে। গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর বিএসএফের ছত্রছায়ায় দেড় থেকে দুই শতাধিক ভারতীয় নাগরিক তীর-ধনুক নিয়ে বিরোধপূর্ণ ২৩০ একর জমিতে অবস্থান নিলে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। অবশ্য পরদিন পদুয়ার বিডিআর ও বিএসএফ কর্মকর্তাদের পতাকা বৈঠকে দুঃখ প্রকাশ ও জরিপ কাজে সহযোগিতার বিষয়ে ঐকমত্য হলে উত্তেজনা হ্রাস পায়। এদিন পদুয়ায় দুই দেশের সার্ভে দল তাদের নির্ধারিত কাজ পর্যালোচনা করে।
কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া সীমান্ত বাংলাদেশ ভারতের বিরোধপূর্ণ ভূমির যৌথ জরিপ কাজ কোনো সমস্যা ছাড়া শেষ হয়েছে। এই সীমান্তের ১৩১৮/১ নম্বর মেইন পিলার থেকে বিরোধপূর্ণ ভূমির ওপর বাংলাদেশ ভারতের বিরোধপূর্ণ ভূমির যৌথ জরিপ করা শুরু হয়।
একটি সূত্র মতে, মেঘালয়ের খাসিয়ারা খ্রিস্টান ধর্মালম্বী হওয়ায় আগামী ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনকে কেন্দ্র করে সেখানে উত্সবের আমেজ চলছে। সে কারণে জরিপ কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। দুই দেশের আগের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর জরিপ শেষ হওয়ার কথা। তবে ভারতীয় একটি পত্রিকায় বলা হয়, জরিপ কাজ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
উল্লেখ্য, গত এক বছর বিএসএফ পদুয়া থেকে শ্রীপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সীমান্তে একাধিকবার উসকানিমূলক ঘটনা ঘটায়। বিএসএফের সহযোগিতায় ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশের জমি থেকে ধান কেটে নেয় এবং গরু ধরে নিয়ে যায়। বিভিন্ন মহল থেকে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে অন্তত যৌথ জরিপের দাবি ওঠানো হলে গত ১২ জানুয়ারি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়। ঘোষণায় ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তি দু’পক্ষই মেনে চলবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি সীমানা চিহ্নিতকরণের জন্য জয়েন্ট বর্ডার ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেবিডাব্লিউজি) সক্রিয় করা হয়। গত ২৯ নভেম্বর তামাবিল আইসিপিতে উভয় দেশের ভূমি সার্ভে কমিশনের যৌথ বৈঠকে ৭ ডিসেম্বর থেকে গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর-কানাইঘাট সীমান্তের বিরোধপূর্ণ ভূমি জরিপের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী সিলেটের তিন উপজেলায় গত ৮ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ-ভারত বিরোধপূর্ণ ভূমির যৌথ জরিপের প্রারম্ভিক কাজ শুরু হয়।

সিলেটে পদুয়া সীমান্তে শক্তি বাড়িয়েছে বিএসএফ

এটিএম হায়দার সিলেট

ভারতের মেঘালয় রাজ্য সংলগ্ন সিলেটের সীমান্তে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সীমান্ত জরিপ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পুনরায় শুরু হতে পারে। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জরিপ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সম্প্রতি জরিপ চলাকালে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের বাড়াবাড়ি এবং ক্রিসমাস ও নববর্ষ উপলক্ষে বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে বিভিন্ন সূত্রমতে ভারতের জবল দখলে থাকা বাংলাদেশের পদুয়ায় সম্প্রতি বিএসএফ তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করলেও এর কারণ জানা যায়নি। এদিকে দুই দেশের কর্তৃপক্ষ জরিপ সম্পাদনে আশাবাদী থাকলেও মাঠপর্যায়ের সমস্যাগুলো নিরসন না হলে পুনরায় জরিপ শুরু হলেও তার সফলতা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। আগের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর জরিপ শেষ হওয়ার কথা। তবে ভারতীয় একটি পত্রিকায় বলা হয়, জরিপ কাজ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জরিপ দলের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জরিপ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হওয়ায় সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। জৈন্তাপুর সীমান্তের নিজপাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান
মখলিছুর রহমান দৌল্লা আমার দেশকে বলেন, সীমানা পিলার অনুযায়ী সঠিক সার্ভে হওয়া দরকার। এতে যার যার ভূমি সঠিকভাবে চিহ্নিত হবে। তিনি বলেন, তার ইউনিয়নের ডিবি বিলে ভারতীয়রা জরিপ শুরুর আগেই ৫৫ একর জমি তাদের বলে দাবি করে। তারা নিজেদের একতরফাভাবে তৈরি একটি ম্যাপও দেখায়। যা বাংলাদেশী জরিপ দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। সঠিক জরিপ হলে আমাদের ভূমি ভারতীয় জবরদখল থেকে মুক্ত হবে। এ ব্যাপারে পশ্চিম জাফলং ইউপি চেয়ারম্যান ফয়জুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার উপস্থিতিতে জরিপ শুরু করা হলে তখন বোঝা যাবে কারা জরিপ কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। সঠিক জরিপ হলে তার ইউনিয়নে জবরদখলকৃত সোনারহাট ও পদুয়ার জমি অবশ্যই ফেরত পাওয়া যাবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মেঘালয় থেকে প্রকাশিত পত্রপত্রিকায় বলা হয়েছে, আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে সীমান্ত জরিপ পুনরায় শুরু হবে। পত্রিকায় আরও বলা হয়, বড়দিন উপলক্ষে রাজ্যের জরিপ দল সাময়িকভাবে কাজে বিরতি দিয়ে ছুটিতে গেছেন। মুক্তাপুরে বাংলাদেশের লোকজনের আপত্তিতে জরিপে বিঘ্ন ঘটে বলে অভিযোগ তোলা হয়। এরই মধ্যে লোভাছড়ায় জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৯টি স্থান—লিংখহাট, পদুয়া, কুরিনালা, তামাবিল, আমলিয়ামপিয়িং, রঙখন, আমকি, আমিয়ালঙ ও মুক্তাপুরে সীমান্ত জরিপ করা হবে। পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জরিপ শেষ হওয়ার কথা।
সীমান্ত থেকে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, সাম্প্রতিক জরিপ শুরুর পর থেকে পদুয়ায় বিএসএফ অতিরিক্ত শক্তি বৃদ্ধি করেছে। গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর বিএসএফের ছত্রছায়ায় দেড়-দুই শতাধিক ভারতীয় নাগরিক তীর-ধনুক নিয়ে বিরোধপূর্ণ ২৩০ একর জমিতে অবস্থান নিলে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। অবশ্য পরদিন বিএসএফ পতাকা বৈঠকে এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে। বিভিন্ন সূত্রমতে, জরিপ এলাকাগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করেছে বিএসএফ। কি উদ্দেশ্যে বিএসএফ শক্তি বৃদ্ধি করেছে তা রহস্যজনক।
বাংলাদেশ ও ভারতের ভূমি রেকর্ড সার্ভে কমিশন গত ২৯ নভেম্বর তামাবিল সীমান্তে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বিরোধপূর্ণ ভূমির জরিপ শুরুর সিদ্ধান্তে ঐকমত্য হয়। সেই মোতাবেক ৭ ডিসেম্বর গোয়াইনঘাটের সোনারহাট সীমান্তে প্রাথমিক আলোচনা শেষে ৮ ডিসেম্বর মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু হয়। কিন্তু জরিপ চলাকালে জৈন্তাপুরের ডিবি বিলে ভারতীয়দের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভূমির মালিকানা দাবি এবং পদুয়ায় ভারতীয়দের উস্কানিমূলক আচরণে জরিপ কাজ ব্যাহত হয়। জরিপ চলাকালে ভারতীয়দের ‘বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার’—এ নীতি অবলম্বনসহ জবরদস্তি আচরণে জরিপের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে বলে বাংলাদেশের জরিপ কর্তৃপক্ষ মনে করছে।

Tuesday 28 December 2010

লালমনিরহাটে বিএসএফ’র গুলিতে ব্যবসায়ী নিহত : সীমান্তে উত্তেজনা

লালমনিরহাট ও হাতিবান্ধা প্রতিনিধি

লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া সীমান্তে গতকাল ভোরে বিএসএফের গুলিতে সাইফুর রহমান (২০) নামে এক যুবক ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে। ওই যুবকের লাশ বিএসএফ সদস্যরা টেনেহিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে গেছে। সাইফুল উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের গোলাপ হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় সীমান্তে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। হত্যার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশী বর্ডার গার্ড (বিজিডি)। ঘটনার ১০ ঘণ্টা পরও সাইফুলের লাশ ফেরত না দেয়ায় ওই সীমান্তে বিজিডি-বিএসএফ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। ফলে ওই সীমান্তের গ্রামবাসী ভয়ে আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছেন। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিডি) সূত্র জানায়, গতকাল ভোর ৬টায় হাতিবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া সীমান্তের ৯০১নং মেইন পিলারের সাব-পিলার ৪-এর কাছে ভারতের ৪৬ ব্যাটালিয়নের বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশে ঢুকে সাইফুলকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এতে সাইফুল গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এরপর তারা সাইফুলের লাশ টেনেহিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিডি)-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আসলাম হোসেন জানান, বিএসএফের গুলিতে নিহত সাইফুল গরু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি সীমান্তে ভারতীয় গরু নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। বিএসএফ সদস্যরা আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে তার লাশ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। লাশ ফেরত চেয়ে গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় বিশেষ দূতের মাধ্যমে ৪৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে লাশ ফেরতের ব্যাপারে কোনো সাড়া মেলেনি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুরো সীমান্তে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। যে কোনো মুহূর্তে আরও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটতে পারে বলে সীমান্তবাসী আশঙ্কা করছেন ।

দু’বছরে সরকার অর্ধশত উলফা নেতাকে ভারতে হস্তান্তর করেছে



স্টাফ রিপোর্টার

২০০৯ সালের শুরু থেকে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বাধীনতা সংগ্রামরত প্রায় ৫০ উলফা নেতাকর্মীকে আটকের পর ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন উলফা চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়া, বোড়ো বিদ্রোহী নেতা রঞ্জন দাইমারি, মণিপুরি বিদ্রোহী নেতা রাজকুমার মেঘেন। এদিকে উলফার শীর্ষনেতা পরেশ বড়ুয়া অভিযোগ করেছেন, তার ছেলেকে বাংলাদেশে অপহরণ করা হয়েছে।
কলকাতা প্রতিনিধির উদ্ধৃতি দিয়ে অনলাইন সংবাদ সংস্থা বিডিনিউজ জানিয়েছে, ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়া বৃহস্পতিবার ই-মেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে তার ছেলেকে বাংলাদেশে অপহরণের অভিযোগ করেছেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার এ অভিযোগ সম্পর্কে তার অজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পরেশ বড়ুয়া অভিযোগ করেন, তার কিশোর ছেলেকে যারা অপহরণ করেছে তারা ভারত সরকারের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য তাদের চাপ দিচ্ছে।
পরেশ বড়ুয়া বলেন, কিন্তু এতে কাজ হবে না। আসামের স্বাধীনতার লড়াইয়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ প্রাণ দিয়েছে, শহীদের ওই দীর্ঘ তালিকায় আমার ছেলের নাম যদি অন্তর্ভুক্ত হয় এবং যদি সেটা ঘটে তবে তার জন্য আমি প্রস্তুত আছি।
কিন্তু ছেলেকে কখন অপহরণ করা হয়েছে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানাননি। তবে ঘটনাকে ‘একটি ভারতীয় ষড়যন্ত্র’ হিসেবে ইঙ্গিত করলেও কারা এর নেপথ্যে থাকতে পারে সে বিষয়ে তিনি সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি।
বিবৃতিতে তিনি কিছু শীর্ষ উলফা নেতার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তারা এখন ‘যাবতীয় নীতিকথা বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছে’ এবং ভারত সরকারের সঙ্গে আপসের চেষ্টা করছে।
পরেশ বড়ুয়া এ ধরনের আপসকামিতার বিরোধিতা করে বলেন, আসামের সার্বভৌমত্বের বিষয়টি প্রাধান্য না পেলে ভারতের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না। তবে ভারত সরকার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
বলা হচ্ছে, উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোথাও আত্মগোপন করে আছেন। তার স্ত্রী ববি বড়ুয়া ওরফে সুফিয়া বেগম ও ছেলে তাহসিম বড়ুয়া ওরফে আকাশ খান ঢাকায় অবস্থান করছেন। ভারতের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনায় রাজি হওয়ার পর আসামের কারাগার থেকে অনেক উলফা নেতাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
আসাম সরকার উলফা নেতা অরবিন্দ রাজখোয়ার জামিন আবেদনের বিরোধিতা না করায় খুব শিগগিরই তাকেও মুক্তি দেয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে আটকের পর রাজখোয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়

রাজশাহী সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে ব্যবসায়ীর মৃত্যু

রাজশাহী অফিস

রাজশাহীর খানপুর সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে এক গরু ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই গরু ব্যবসায়ীর নাম তাজেরুল ইসলাম (৩০)। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায়। গত শুক্রবার রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা তার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নগরীর মতিহার থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
মতিহার থানা সূত্রে জানা যায়, তাজেরুল কয়েকজন সহযোগীসহ গরু আনতে ভারত সীমান্তে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গীরা ফিরে আসতে সক্ষম হলেও তাজেরুলকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। তাজেরুলের সহযোগীরা এ খবর খানপুর বিজিবি
ক্যাম্পে জানায়। এরপর রাতে নোম্যান্সল্যান্ডে তার লাশ ফেলে রেখে যায় বিএসএফ।

ভারতীয় পত্রিকার খবর : জঙ্গি সন্দেহে ১৮ বাংলাদেশী ভারতে আটক

কূটনৈতিক রিপোর্টার

ভারতীয় জলসীমা থেকে ট্রলারসহ ১৮ বাংলাদেশীকে জঙ্গি সন্দেহে আটক করা হয়েছে বলে একটি ভারতীয় পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে।
ভারতীয় দৈনিক পত্রিকা বর্তমান-এ প্রকাশিত এই খবরে বলা হয়, গত শুক্রবার সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে বংগাদুনি দ্বীপের কাছ থেকে সোনারতরী নামের একটি ট্রলারসহ ১৮ বাংলাদেশীকে আটক করে ভারতীয় কোস্টগার্ড।
এই আটকের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গত রাতে জানান। ভারতীয় পত্রিকার খবরে বলা হয়, ট্রলারটি চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে এসে ভারতীয় জলসীমার ২৫ কিলোমিটার ভেতরে বংগাদুনি দ্বীপের কাছে ঘোরাফেরা করছিল।
এ সময় ভারতীয় জেলেরা কোস্টগার্ডের কাছে খবর পাঠায়। পরে ভারতীয় কোস্টগার্ডের একটি হোভারক্রাফট ট্রলারটিকে ১৮ জন বাংলাদেশীসহ আটক করে। এ ব্যাপারে ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসক জানান, সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে তাদের আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Sunday 17 October 2010

বাধা দিয়েও ওপরের নির্দেশে পিছু হটলো বিডিআর : সীমান্তের ৫০ গজের মধ্যে বেড়া তৈরির অনুমতি পেল ভার

ভারতের চাপের কাছে নতিস্বীকার করতে হলো বাংলাদেশকে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে সীমান্তের ৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অনুমতি বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নিল ভারত। প্রথমে বিডিআর এ কাজে বাধা দিলেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে কেবল তারা সরেই আসেনি, মাপজোক করে স্থাপনা তৈরির জন্য বিএসএফকে জায়গাও বুঝিয়ে দিয়ে এসেছে। এর আগে বিএসএফ বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে জোরপূর্বক কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করলেও এই প্রথম সীমান্তে বেআইনি স্থাপনা নির্মাণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিডিআর আনুষ্ঠানিক সম্মতি দিল।
এ ছাড়া সীমান্তের ৪৬টি পয়েন্টে বাংলাদেশের ভূমিতে ঢুকে বেড়া নির্মাণ করার আবদার তুলেছে ভারত। এজন্য বাংলাদেশের ওয়ার্কিং টিম সরেজমিন বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে। কমিটি ৬টি শর্তসাপেক্ষে সীমান্তের ১২টি পয়েন্টে বাংলাদেশের জমিতে বেড়া নির্মাণ করতে দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শর্তগুলো হলো, তিনবিঘা করিডোর ইস্যু নিষ্পত্তি করা, ৩২টি ফেনসিডিল কারখানা সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া, ছিটমহল সমস্যার স্থায়ী সমাধান, পঞ্চগড় ও বাংলাবান্ধায় পর্যটন সুবিধা দেয়া, দুই দেশের যৌথ সিদ্ধান্তে লক্ষ্মীপুরে নির্মিত ব্রিজের সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং অপদখলীয় ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধান। অথচ এসব ইস্যুর সমাধান ছাড়াই বাংলাদেশ একের পর এক ছাড় দিয়ে চলেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আমাদের আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিএসএফ আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অমান্য করে আখাউড়া সীমান্তের ২০১৯ মেইন পিলারের সাব পিলার ৯ এস ও ১০ এস পিলারের মাঝামাঝি আজমপুর সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করছিল। গত শুক্রবার দুপুরে বিএসএফ বেড়া নির্মাণ করতে এলে বিডিআর যথারীতি বাধা দেয়। এতে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। আখাউড়া সীমান্তের ওপারে আগরতলা বিমানবন্দর। ওই বিমানবন্দরের নিরাপত্তার নামে বিএসএফ সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে ৫০ গজের মধ্যে বেড়া নির্মাণের জন্য অনেক দিন থেকেই চেষ্টা করে আসছিল; কিন্তু বিডিআরের তীব্র বাধার মুখে তা বার বার ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত গতকাল বিডিআরকে হার মানতে হয় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ১৫০ গজের মধ্যে দুই দেশের কেউ কোনো স্থাপনা তৈরি করতে পারে না। আজমপুরে বেড়া নির্মাণের ব্যাপারে নজিরবিহীন ও বেআইনি সমঝোতার বিষয়টি দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত মতে হয়েছে বলে বিডিআর সূত্র জানিয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বেড়া নির্মাণ নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় বিডিআর-বিএসএফের পতাকা বৈঠক শুরুু হয়। সকাল সাড়ে এগারটায় বৈঠক শেষে বিডিআর ১ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মাসরুুর আহম্মেদ শিহাব বলেন, কোন জায়গায় বিএসএফ বেড়া নির্মাণ করবে তা মাপজোক করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
রাইফেলস ব্যাটালিয়ন ১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু সালেহ বলেন, সরকারের অনুমতি রয়েছে আজমপুর সীমান্তের ওপারে বিএসএফ ৫০ থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে পারবে।
বৈঠকে বিডিআরের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ১ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন উপ-অধিনায়ক মেজর মাসরুর আহম্মেদ শিহাব। অপরদিকে বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিএসএফ ৬ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক লে. কর্নেল সঞ্জয় চৌহান। বর্তমানে সেখানকার সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/10/17/49187

সিরাজগঞ্জ ট্র্যাজেডি : চালক রাজ গোবিন্দ কিছুদূর গিয়ে কেন ট্রেনটি থামিয়ে দিলেন



চালক আছিরউদ্দিনকে বসিয়ে রেখে ট্রেনটি চালাচ্ছিলেন সহকারী চালক রাজ গোবিন্দ। গেটম্যান হীরামন দাস জনসভার মধ্যেই সবুজ পতাকা উড়িয়ে ট্রেনটি সামনে যাওয়ার সঙ্কেত দিলেন। ট্রেনের গার্ড ছিলেন জ্যোতিন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ঘটনার পুলিশি তদন্ত করছেন জিআরপি থানার ওসি বিমল কুমার চাকী। তিনি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রাজ গোবিন্দের সাক্ষ্য নিয়েছেন। মামলার বাদী হয়েছেন জেএন মুখার্জী। কমিটির প্রধান হিসেবে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপক রঞ্জন অধিকারী ঘটনার তদন্ত করছেন। দুর্ঘটনার পর রাজশাহীর অতিরিক্ত কমিশনার স্বপন কুমার রায় ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন।
চালক আছিরউদ্দিনকে বসিয়ে রেখে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালাচ্ছিলেন সহকারী চালক রাজ গোবিন্দ। সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ মুলিবাড়ি রেলগেটের গেটম্যান ছিল হীরামন দাস। গার্ড ছিল জ্যোতিন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। সামনেই বিএনপির জনসভা। লোকে লোকারণ্য। ওই জনসভার মধ্যেই হীরামন দাস সবুজ পতাকা উড়িয়ে ট্রেনটি সামনে যাওয়ার সঙ্কেত দিলেন। রাজ গোবিন্দ হুইসেল না বাজিয়ে ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেনটি নিয়ে এগোতে থাকলেন সামনের দিকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জনসভা জেনেও হুইসেল না বাজিয়ে দ্রুতগতিতে ট্রেনটি নিয়ে সামনে এগুনোতেই দেখা দেয় বিপত্তি। ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হন ৭ জন। আহত অনেক। এরই মধ্যে চালক গোবিন্দ রাস্তা ফাঁকা পেয়েও ট্রেন চালিয়ে সামনে এগিয়ে নেননি। দুর্ঘটনাস্থলের কিছুদূর গিয়েই হঠাত্ থামিয়ে দেন ট্রেনটি। তিনি জানতেন ট্রেনটি থামালে পড়তে হবে বিক্ষুব্ধ জনতার রোষানলে। তবুও ট্রেনটি থামিয়ে দিলেন তিনি। যার ফলে সমাবেশে যোগ দেয়া হতাহতদের সঙ্গী-সাথীদের রোষানলে পড়ে ট্রেনটি। ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন।
এই ঘটনায় মৃত্যুর দায় নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে। খালেদা জিয়ার সভাস্থলের পাশে ট্রেনে কাটা পড়ার পর বিএনপির ৭ কর্মী নিহত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যায়। এতেও জন্ম দেয় নানা প্রশ্নের। দুর্ঘটনার পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায়ী করে মামলা, সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও নেতাদের বক্তব্য নিয়েও তৈরি হয়েছে নানা রহস্যের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এত বিশাল সমাবেশের খবর জেনেও মুলিবাড়ি গেটম্যান হীরামন দাস ট্রেনটিকে হলুদ পতাকা দেখিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চলার পরামর্শ দেননি। সহকারী চালক রাজ গোবিন্দ ট্রেনটি ধীরে না চালিয়ে হুইসেল না বাজিয়ে দ্রুত চালিয়ে নেন। এরই মধ্যে বেশকিছু মানুষ কাটা পড়ে। লোকজন রেল লাইন থেকে হুড়োহুড়ি করে সরে যাওয়ার পর তিনি থামিয়ে দেন ট্রেনটি। এতে পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়, উদ্দেশ্যমূলকভাবেই ট্রেনটি জনসভার ওপর দিয়ে চালিয়ে নেয়া হয়েছে। আবার সামনে রাস্তা পরিষ্কার পেয়ে সেটি পরিকল্পিতভাবে থামানো হয়। যার ফলে সমাবেশে আসা লোকজনের রোষানলে পড়ে ট্রেনটি। যার থেকে ঝরে যায় ৭টি তাজা প্রাণ। ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় ট্রেনটিতে। গত সোমবার তাদের গণপিটুনি ও আগুনে ট্রেনের চালকসহ কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র্যাব-পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে চালানো হয় রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও গুলি।
দুর্ঘটনার পর সিরাজগঞ্জ থেকে দমকল বাহিনীর একটি গাড়ি ছুটে এলে জনতা তাদের ওপরও হামলা চালায়। পুলিশ এসময় টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। খালেদা জিয়া পৌনে ৪টায় সমাবেশস্থলে এসে বক্তব্য দেন। তার বক্তব্যকালে মঞ্চের পেছনে প্রায় ১২ গজের মধ্যে লতিফের লাশ ও ট্রেন লাইনে কাটা একটি মানুষের পা পড়ে থাকতে দেখা যায়।
দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ট্রেনে থাকা বগুড়া রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার বেনজিরুল ইসলাম বলেন, তার চোখের সামনে ৪ জন মারা গেছেন। চালক ও গেটম্যান ইচ্ছা করলে ট্রেনটি থামাতে পারতেন। হুঁইসেল বাজিয়ে ধীরেসুস্থে ট্রেনটি নিয়ে পার হতে পারতেন তারা। কিন্তু তা না করে দ্রুত ট্রেন চালানোতেই এই বিপত্তি। কিন্তু যখন একের পর লোক ট্রেনে কাটা পড়ছে তখন ইচ্ছে করলেও ট্রেনটি থামানো সম্ভব হতো না। অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে, পরে ট্রেনটি থামিয়ে ট্রেনটিতে নাশকতা চালানোর সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
যদিও বলা হচ্ছে মৃত্যুগুলো হয়েছে দুর্ঘটনায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেটার জন্য দায়ী কারা? রেললাইনের পাশে জনসভার স্থান নির্ধারিত না হলে হয়তো দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। যোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন, ‘অরাজকতা সৃষ্টির উদ্দেশে বিরোধী দল পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানোয় সিরাজগঞ্জে ট্রেন দুর্ঘটনা এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।’
যোগাযোগমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর ওই ঘটনা নিয়ে আরও কতগুলো গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। বিতর্ক হচ্ছে, এটি কি স্রেফ দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত দুর্ঘটনা। এর সঙ্গে দায়িত্বহীনতাও রয়েছে কিনা সে প্রশ্নও উঠেছে। শহীদ জেহাদ দিবস উপলক্ষে বিরোধীদলীয় নেত্রীর জনসভাটি হওয়ার কথা ছিল উল্লাপাড়ায়। বিএনপির সমাবেশ ঘোষণার পর সেটাকে প্রতিহত করতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ একই স্থনে সমাবেশ ডাকে। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সয়দাবাদে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়। ক্ষমতাসীন দল থেকে উল্লাপাড়ায় বিএনপির জনসভা প্রতিহত করার ডাক না দিলে সয়দাবাদকে জনসভার স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হতো না বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এরপরও এই জনসভার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা যোগাযোগ সচিবকেও জানানো হয়। অর্থাত্ খালেদা জিয়ার জনসভার বিষয়টি সম্পর্কে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবগত ছিল। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র সহকারী সচিব জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান। যোগাযোগ মন্ত্রণালরের কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয়নি। আবার রেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা জানে না জনসভার বিষয়টি। সবকিছুতেই এক ধরনের অস্পষ্টতা। তাছাড়া কেন নির্ধারিত স্থানে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি এর জবাবে কী বলবেন যোগাযোগমন্ত্রী?
প্রশ্ন উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনই বা এমন জায়গায় সমাবেশের অনুমতি দিল কীভাবে, যার ওপর দিয়ে ট্রেন চলে? শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য থাকার কথা পুলিশের। রেল কর্তৃপক্ষেরও সজাগ থাকার কথা যে, হাজার হাজার লোকের মাঝ দিয়ে ট্রেন নিতে হলে আগাম সতর্কতা লাগবেই। যারা দেশ চালান, যারা দল চালান বা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কিংবা ট্রেনের চালক—তাদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতার ছিটেফোঁটা হলেও থাকা উচিত। অনেকের জানমালের দায়িত্ব তাদের ওপর। এ ঘটনায় দেখা যাচ্ছে চালানোর ক্ষমতা যতটা উপভোগ করেন, দায়িত্বটা ততটাই ভুলে যান।
জনসভাস্থলের দুই কিলোমিটারের মধ্যে দুটি রেলস্টেশন থাকায় ট্রেনের গতিবেগ কম থাকার কথা। কিন্তু ট্রেনটির সহকারী চালক রাজ গোবিন্দ দাস বলেছেন, তিনি জনসভার বিষয়টি একেবারেই অবগত ছিলেন না। ফলে স্বাভাবিক গতিতে ট্রেন চালিয়েছেন। এ দিন ট্রেনের চালক আছিরউদ্দিন ট্রেনে থাকলেও তা চালাচ্ছিলেন সহকারী চালক রাজ গোবিন্দ দাস। রাজ গোবিন্দ বলেছেন, ভ্যাকুয়াম পাইপলাইন ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে তিনি ট্রেনটি থামিয়েছেন। লোকগুলো ট্রেনে কাটা পড়ার পর ভ্যাকুয়াম পাইপলাইন ছিঁড়ে গেল, আর সময় পেল না। এটাও প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। ট্রেনটি জনসভাস্থল অর্থাত্ দুর্ঘটনার পর কেন থামানো হয়েছিল তা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে রয়েছে। কারণ এ ধরনের ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও রেলস্টেশন ছাড়া ট্রেন রাস্তায় থামিয়ে দেয়ার নজির নেই। গেটম্যান হীরামন দাস নীরব থেকেই ট্রেন থামানোর সিগন্যাল দেননি। ট্রেনটি দুর্ঘটনার পর থামানোর ফলে ক্ষুব্ধ জনতা আগুন ধরিয়ে দেয়। জিআরপি থানার ওসি বিমল কুমার চাকী এরই মধ্যে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রাজ গোবিন্দের সাক্ষ্য নিয়েছেন। এ দুর্ঘটনার পর রেলওয়ের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। জিআরপি থানার মামলার বাদী হয়েছেন ওই ট্রেনের গার্ড জে এন মুখার্জী। মামলার পর গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়।
এ ঘটনা তদন্তে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপক রঞ্জন অধিকারীকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তদন্ত সুষ্ঠু হবে না। কারণ যোগাযোগ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে আগেই মন্তব্য করেছেন। তদন্ত কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানা গেছে। দুর্ঘটনার রাজশাহীর অতিরিক্ত কমিশনার স্বপন কুমার রায় ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/10/17/49074

Tuesday 17 August 2010

ভারতকে ট্রানজিট দিতে অসম্ভব দ্রুততায় প্রকল্প অনুমোদন : বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন

জাহেদ চৌধুরী
ভারতকে সড়ক, রেল, নৌপথে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নিশ্চিত করতে খুবই দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন করছে সরকার। গত জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ৫০ দফা সমঝোতা স্মারকের আলোকে শিগগিরই বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এ লক্ষ্যে শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসবেন। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশ সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের একশ’ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের স্বাক্ষরিত এই ঋণচুক্তির শর্ত এবং উদ্দেশ্য নিয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ভারতের এক্সিম ব্যাংকের নিজস্ব ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ভারত সরকারের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষা করেই এরা বিভিন্ন দেশকে ঋণ দিয়ে থাকে। ঋণচুক্তির মাধ্যমে যে টাকা ধার হিসেবে পাওয়া যাবে তা চড়া সুদ ও কঠিন শর্তে মূলত ভারতের ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করতেই ব্যবহৃত হবে। প্রণব মুখার্জির সফরের সময়ই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার সফরের আগেই বাংলাদেশ ট্রানজিট সুবিধার কাজটি এগিয়ে নিতে চায়।
ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের দশ দিনেই মধ্যেই গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের বৈঠকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ভারত সংশ্লিষ্ট প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নৌপথ ড্রেজিংয়ের জন্য প্রায় ২১শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬টি ড্রেজার কেনা এবং ভারত থেকে বিদ্যুত্ আমদানির লক্ষ্যে বিদ্যুত্ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের জন্য এক হাজার ৭৯ কোটি টাকার প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী দ্রুত এসব ড্রেজার সংগ্রহ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনা সচিব হাবিব উল্লাহ মজুমদার। এর আগেই প্রণব মুখার্জির সফর শেষ হওয়ার চারদিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বেনাপোল স্থলবন্দর এবং শুক্রবার মংলা সমুদ্রবন্দর পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতকে তাদের পণ্য নিজ দেশে নিয়ে যেতে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেয়ার কথা ঘোষণা করেন। ভারত চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর আমদানি-রফতানির জন্য নিজ দেশে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছে। এজন্য ত্রিপুরার সর্বদক্ষিণে অবস্থিত সাবব্রুম পর্যন্ত জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং একইসঙ্গে সাবব্রুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের কাজও চলছে। বাংলাদেশ এই রুটে ভারতের ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের অনুমতি সে দেশকে দিয়েছে। এ সেতু নির্মিত হলে সাবব্রুমের সঙ্গে রামগড়ের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। সাবব্রুম থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৭৫ কিলোমিটার। এদিকে আখাউড়ায় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। ভারত তাদের ওডিসি (পণ্যবাহী বড় আকারে কন্টেইনার) পরিবহনের জন্য এ বন্দর ব্যবহার করবে।
এর আগে গত বছর সেপ্টেম্বরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি দিল্লি সফরে গেলে ভারতের ত্রিপুরার পালাতানায় ৭২৬ মেগাওয়াটের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে আশুগঞ্জ নদীবন্দর হয়ে ওডিসি পরিবহনের জন্য আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কে ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার বাংলাদেশের সম্মতির কথা জানান। এজন্য আশুগঞ্জ নদীবন্দরকে ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণাসহ প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেয়া হলেও বাংলাদেশের অবকাঠামো এখনও ওডিসি পরিবহনের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়নি। ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল এরই মধ্যে দু’দফায় আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত সড়ক সরেজমিন পরিদর্শন করে অবকাঠামো উন্নয়নের বিভিন্ন দিক চিহ্নিত করেছে। বিদ্যুত্ কেন্দ্রের জন্য ভারত প্রায় ১০০টি ওডিসি বার্জে করে আশুগঞ্জ নৌবন্দরে আনবে। সেখান থেকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে সড়কপথে আখাউড়ায় নেয়া হবে। আখাউড়া থেকে রেলযোগে ত্রিপুরার পালাতানায় নেয়া হবে। এজন্য আখাউড়া জংশনে দুই কিলোমিটার আগে বা পরে ত্রিপুরা সীমান্তের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলছে। ওডিসিগুলোর বেশিরভাগই ওজন ১০০ থেকে ২০০ টনের মধ্যে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৫২ টনের দুটি যন্ত্র রয়েছে। এ দুটি লম্বায় ৩০ মিটার, পাশে ৬ মিটার ও উচ্চতায় ৮ মিটার। বাংলাদেশের রাস্তায় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ১৯ মিটার বা ৪০ ফুট কন্টেইনার নিয়ে ট্রেলার চলাচল করে। তাও আবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মতো অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত রাস্তায়। ওডিসি পরিবহনে সময়ের প্রয়োজন হবে এক থেকে দেড় বছর।
ওদিকে বিদ্যুতের আন্তঃদেশীয় গ্রিড লাইন স্থাপন প্রকল্পের অধীন বাংলাদেশ অংশে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ও ভারত অংশে আরও প্রায় ৮০ কিলোমিটার গ্রিড লাইন স্থাপন করতে হবে। পুরো খরচ বাংলাদেশকেই বহন করতে হবে। ভারতীয় অংশের গ্রিড লাইন স্থাপনের টাকাটি বাংলাদেশ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাজ থেকে ঋণ নিয়ে করছে। অর্থাত্ বাংলাদেশী টাকায় ভারতের ভেতর গ্রিড লাইন স্থাপন হবে। এ রকম অভূতপূর্ব শর্তের গ্রিড লাইন স্থাপন নিয়ে সাবেক উপদেষ্টা ও কেবিনেট সচিব আকবর আলি খান প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, এই আড়াইশ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আমদানির কথা বলে এ ধরনের ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহণের কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। এ টাকা দিয়ে প্রায় দেড়শ’ মেগাওয়াটের বিদ্যুত্ প্লান্ট বাংলাদেশের ভেতরেই এই সময়ের মধ্যে স্থাপন করা যেত। ভারতের কাছ থেকে এক দশমিক ৭৫ ভাগ সুদ ও দশমিক ৫০ ভাগ কমিটমেন্ট সুদে নেয়া ঋণের টাকায় এরই মধ্যে চিহ্নিত ১৪টি ছোট-বড় প্রকল্পের বাংলাদেশী স্বার্থ নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। ড. আকবর আলি খান বলেছেন, এর মধ্যে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে আশুগঞ্জে স্থাপিতব্য টার্মিনাল, প্রায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া হয়ে ভারত পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, সাবব্রুম-রামগড় সড়ক সংস্কারে প্রায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ের কোনো প্রয়োজনীয়তা বাংলাদেশের নেই। এগুলো স্রেফ ভারতের কাজে লাগে। এসব বন্দর ও সড়ক দিয়ে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না।
ভারতের ত্রিপুরায় বিদ্যুত্ প্রকল্প নির্মাণে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ বন্দর দিয়ে এক একটি ২শ’ টন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওজনের বড় আকারের ওডিসি কনটেইনার পরিবহন নিশ্চিত করতে হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলতে হবে। ওডিসি পরিবহনের সময় এ সড়ক দিয়ে অন্য যান চলাচল করতে পারবে না। বাংলাদেশের রাস্তায় যেখানে ৫ থেকে ২০ টন ওজনের কনটেইনার পরিবাহিত হয়ে থাকে, সেখানে এত বড় আকারের কনটেইনার পরিবহনে সড়কের বর্তমান অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে বাংলাদেশ যে ক্ষতির সম্মুখীন হবে, তার বিপরীতে বাংলাদেশ খুব সামান্যই শুল্ক পাবে। আর্থিক দিকটি নিশ্চিত না করেই বাংলাদেশ ভারতকে এ জাতীয় সুবিধা প্রদানে রাজি হয়েছে।
ভারতীয় ঋণের টাকায় ৬টি ড্রেজার কেনা ও হাজার কোটি টাকার বিদ্যুত্ গ্রিড প্রকল্প একনেকে অনুমোদন : ভারতের দেয়া ঋণের অর্থে প্রথম প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পের আওতায় দেশের নদী খননের জন্য ৬টি ড্রেজার কিনতে ভারতীয় ঋণের ৪৭২ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। গতকাল শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় এ সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। সভাশেষে পরিকল্পনা সচিব হাবিবুল্লাহ মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৬টি ড্রেজার কিনতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ সহায়তার বাইরে ১৬৭ কোটি টাকার জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। ড্রেজারগুলোর মধ্যে একটি মংলা বন্দরের জন্য, তিনটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং দুটি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জন্য।
পরিকল্পনা সচিব জানান, ২০১২ সালের জুলাইয়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। তবে ড্রেজারগুলো কোন কোন নদীর খনন কাজে ব্যবহার করা হবে, তা জানাতে পারেননি তিনি।
গত ৭ আগস্ট ভারতের সঙ্গে একশ’ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। এই চুক্তি সইয়ের ১০ দিনের মধ্যে প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হাবিবুল্লাহ মজুমদার বলেন, ঋণ সহায়তার বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তির আগেই প্রকল্প প্রস্তুতের জন্য সময় পাওয়া গিয়েছিল।
গত জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশকে একশ’ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেয় ভারত।
এছাড়া একনেক সভায় ভারত থেকে বিদ্যুত্ আমদানির লক্ষ্যে ৩০ কিলোমিটার গ্রিড ইন্টারকানেকশন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য এক হাজার ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৭শ’ কোটি টাকা দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং ৩৭৯ কোটি টাকার জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। হাবিবুল্লাহ মজুমদার বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের ভেড়ামারা থেকে ভারতের বহরমপুর সীমান্ত পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার ৪০০ কেভি গ্রিড সংযোগ লাইন নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রথম বছরে ২৫০ মেগাওয়াট এবং পরের ৩৪ বছর ৫০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুত্ আদান-প্রদান করা যাবে। ২০১২ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরই বিদ্যুত্ আদান-প্রদান করা যাবে বলে জানান তিনি।
এছাড়া দেশে গ্যাস সঙ্কট মেটাতে ৫টি নতুন কূপ খনন ও ১টি কূপ মেরামতের জন্য ৭৬৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে একনেকে।
অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে বাজুরিয়া- গান্ধাসুর- সাতপাড়- পাতিয়ারা- রামদিয়া (রামদিয়াবাজার বাইপাসসহ) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ২৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচুড়িয়া -ফরিদপুর - ভাঙ্গা রেলপথ পুনর্বাসন ও নির্মাণ প্রকল্প এবং ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গোয়ালন্দ- ফরিদপুর- তাড়াইল সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/08/18/39744

Monday 16 August 2010

আওয়ামী লীগের বেপরোয়া এমপিরা

মির্জা মেহেদী তমাল
ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন শাসকদলের কিছু সংসদ সদস্য। সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। শুধু তাই নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষকদেরও তারা রেহাই দিচ্ছেন না। মারধর করছেন প্রকাশ্যে। কোনো কোনো স্থানে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেই দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন অনেক এমপি। দলের একাধিক এমপি এভাবে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় সরকারের নীতিনির্ধারকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

বিশেষ করে নুরুন্নবী শাওন এমপির বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারে খুনের ঘটনা ঘটায় বিষয়টি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে ভাবিয়ে তুলেছে। সূত্রে জানা গেছে, খোদ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে দল এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন পদাধিকারীর সঙ্গে কথা বলেছেন। সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের এমনও বলেছেন, '৯৬ এর সরকারে কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বেপরোয়া আচরণের চরম মূল্য গোটা দলকে দিতে হয়েছিল। এমনটি ভবিষ্যতে হোক তিনি চান না। এ জন্য অবিলম্বে অসংযত আচরণকারী এমপিদের লাগাম টেনে ধরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ দিকে সরকারি দলের এমপিদের কার্যক্রম নিয়ে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাকেও প্রতিবেদন দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ঘনিষ্ঠসূত্র জানায়, বিতর্কিতদের দায়দায়িত্ব যাতে দলের ওপরে না আসে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে ইতোমধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলেছেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি দলীয়ভাবেও বিতর্ক সৃষ্টিকারী সংসদ সদস্যদের একটি তালিকা করতে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বেপরোয়া এমপিদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী কঠোর অবস্থান নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোলা-৩ আসনের এমপি ও যুবলীগ নেতা নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। খোদ রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সংসদ ভবন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবলীগ কর্মী ইব্রাহীমের মৃত্যুর ঘটনায় তার দিকে সন্দেহের তীর ছুড়ছেন অনেকেই। পুলিশ ইতোমধ্যে তার অস্ত্র ও জিপ গাড়ি জব্দ করেছে। এ দিকে ৩০ জুন আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কে আশুলিয়া বাজারসংলগ্ন সেতুর কাছে কর্তব্য পালনের সময় মো. ইলিয়াসউদ্দিন মোল্লাহ এমপি সাভারের ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. শরীফুল ইসলামকে মারধর করেন। এ ঘটনায় সার্জেন্ট শরীফুল ইসলাম ইলিয়াসউদ্দিন মোল্লাহর বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। ঢাকা-৪ আসনের এমপি সানজিদা খানমের বিরুদ্ধে রাস্তার উন্নয়নকাজ বন্ধ রেখে চঁাঁদা দাবির অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর দয়াগঞ্জের একটি সড়কের উন্নয়ন নিয়ে চাঁদা দাবি ঘটনা থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরীর বিরুদ্ধে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি নিয়ে দুর্নীতি ছাড়াও সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কথা বলায় ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা মনিরকে মারধর পর্যন্ত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে সারাহ বেগম কবরী বলেন, 'আমি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ। আমার দ্বারা কাউকে মারধর সম্ভব?' এ দিকে যশোর-১ আসনের সরকারদলীয় এমপি শেখ আফিলউদ্দিন রবিবার শার্শা থানার ওসিকে পিটিয়েছেন। যুবদল নেতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ায় ক্ষুব্ধ আফিলউদ্দিন এ ঘটনা ঘটান। তাকে মারধরের সময় থানার কয়েকজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে আফিলউদ্দিন এমপি বলেন, ওসি তার নিজের অপকর্ম ঢাকতে আমার সম্পর্কে কুৎসা রটাচ্ছেন। মারধরের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি মো. আজিজুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভিজিএফ কার্ড বিতরণে হস্তক্ষেপ, কর্মীদের মারধর, অসহযোগিতা, দুর্ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। গত বছর অক্টোবরে ভূমি প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে সংসদ সদস্য মো. আজিজুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র। নবাবগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান অভিযোগ করেছিলেন, আজিজুল হক চৌধুরী এমপির নেতৃত্বে এলাকায় ভিজিএফ, কাবিখাসহ বিভিন্ন সরকারি কাজে লুটপাট চলছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের আবদুল ওদুদ এমপি ও তার সহযোগী মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে মামলা হয়েছে। চলতি বছরের ৯ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে এ মামলা করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান এবং স্থানীয় হাবিবুর রহমান ও মো. আলাউদ্দীন। এ দিকে গত বছর ৩১ ডিসেম্বর ভোর ছয়টা থেকে কঙ্বাজার শহরের প্রবেশমুখ কলাতলীতে পুলিশ গাড়ি তল্লাশি করছিল। বেলা ১২টার দিকে সরকারি দলের এমপি এম এ লতিফ ওই তল্লাশি থেকে ২০ গজ দূরে তার গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আবদুল আজিজ ও পরে হাবিলদার শামসুল আলমকে ডেকে পাঠান। পুলিশ অভিযোগ করে, লতিফ এমপি ওই দুজনকে তুই-তুকারি করে তল্লাশির কারণ জানতে চান। নিজেকে সরকারি দলের এমপি পরিচয় দিয়ে তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এ ছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে এসে ফুল দিতে গিয়েও পুলিশকে মারধর করেন চট্টগ্রামের আলোচিত এই এমপি।

কঙ্বাজার-টেকনাফ সড়কের কুতুপালং উচ্চবিদ্যালয়সংলগ্ন একটি বিকল সড়ক মেরামত ও ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে ১৬ জুন আবদুর রহমান বদি এমপি নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হালিমকে মারধর করেন। এর প্রতিবাদে কঙ্বাজার ঠিকাদার কল্যাণ সমিতি জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়ক, সেতু ও কালভার্টের নির্মাণকাজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখে। ২৩ জুন এক সমঝোতা বৈঠকে নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হালিমকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চান এমপি আবদুর রহমান বদি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে একাই ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটির সভাপতি হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের আংশিক) আসনের সরকারদলীয় এমপি আবদুল মান্নান। অথচ সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একজন এমপি তার নির্বাচনী এলাকায় সর্বোচ্চ চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারেন। এ ব্যাপারে মার্চের প্রথম সপ্তাহে যশোর শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগও করেছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম। কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারী) আসনের ক্ষমতাসীন দলের এমপি মো. জাকির হোসেন ৬ জানুয়ারি রৌমারী ভূমি অফিসের কর্মচারী মোশাররফ হোসেনকে মারধর করেন। অফিস সহকারী পদে পছন্দমতো প্রার্থীকে নির্বাচিত না করায় সুনামগঞ্জের জয়শ্রী উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভাপতি এবং জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্কাছ উদ্দিন আহমেদকে মারধর করেছেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও এমপির মারধরের হাত থেকে রক্ষা পাননি। দলীয় এমপিদের বেপরোয়া আচরণের বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই দল বিষয়টি দেখবে। তিনি বলেন, দলের ভাবমূর্তি সবার আগে। কারো আচরণ যদি দলের জন্য ক্ষতিকর হয় তাহলে তিনি যত ক্ষমতাধরই হোন না কেন পার পাবেন না।

http://bangladesh-pratidin.com/

Thursday 3 June 2010

মিগ-২৯ সমাচার : ৮টির মধ্যে ৬টিই গ্রাউন্ডেড : এগুলো এখন বিমানবাহিনীর গলার ফাঁস



29/04/2010

অলিউল্লাহ নোমান
বহুল আলোচিত-সমালোচিত মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান এখন বিমানবাহিনীর গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আকাশে না উড়ে পরিণত হয়েছে বিমানবাহিনীর শো পিসে। ৮টি মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমানের ৬টি দীর্ঘদিন থেকে গ্রাউন্ডেড। জোড়াতালি দিয়ে দু’টি আকাশে উড়ানো হলেও তাতে যুদ্ধাস্ত্র নেই। মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানগুলো বাংলাদেশে আনার পর থেকেই বিপাকে পড়েছে বিমানবাহিনী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন থেকে গ্রাউন্ডেড হয়ে থাকা ৬টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান মেরামত করতে বিপুল অংকের টাকার প্রয়োজন। মেরামত করার মতো টাকা বরাদ্দ নেই বিমানবাহিনীর।
অপরদিকে প্রতিবেশী দেশ আরও উন্নত যুদ্ধবিমান তাদের বহরে জোগান দিচ্ছে। এমনকি মিয়ানমারের বিমানবহরের ১২টি অত্যাধুনিক মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আরও ২০টি মিগ-২৯। পরবর্তী ২০টি মিগ-২৯ তাদের বিমানবাহিনীর বহরে জোগান দেয়ার জন্য এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ যখন মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করে, একই সময়ে মিয়ানমারও ১২টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করে। তারা বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় অর্ধৈক দামে ১২টি মিগ ক্রয় করেছিল। তাদের সবগুলো মিগ-২৯ সচল আছে। বাংলাদেশের মিগ-২৯গুলো দীর্ঘদিন থেকেই অচল অবস্থায় গ্রাউন্ডেড। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশ অত্যাধুনিক মডেলের মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয় করলেও বর্তমানে কাজে আসছে না। এতে বিমানবাহিনীর একটি ইউনিট পুরোপুরি শক্তিহীন হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
বিমানবাহিনীর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গ্রাউন্ডেড অবস্থায় অকেজো হয়ে থাকা ৬টি বিমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে দু’টি মিগ-২৯কে কোনোরকমে সচল রাখা হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে এই দু’টি মিগও গ্রাউন্ডেড হয়ে যাবে। এতে পুরো অচল হয়ে পড়বে বিমানবাহিনীর ৫নং স্কোয়াড্রন। ৮টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান দিয়ে স্কোয়াড্রন-৫ গঠন করা হয়েছিল। মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩৭৫ ও ২৬৪ পরিচিতি নম্বরের দু’টি দুই আসনবিশিষ্ট ট্রেইনার। যার মডেল হচ্ছে ‘ইউ’। এছাড়া ৫০১, ৫০২, ৫০৩, ৫০৪, ৫০৫ ৫০৬ পরিচিতি নম্বরের ৬টি এক আসনবিশিষ্ট বিমান। এগুলোর মডেল হচ্ছে ‘বি’। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন থেকে ২০০১ সালের জুলাই পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ সরকার মিগ-২৯গুলো ক্রয় করে। মিগ-২৯গুলো পুরনো ছিল বলে তখনই অভিযোগ উঠেছিল। বিমানগুলো ক্রয় করে দেশে অনার কিছু দিন পরই ওগুলো অচল হয়ে যায়। বিমানগুলো সারানোর জন্য ২০০০ সালে রাশিয়া থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসা হয়েছিল। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়ে দিয়েছিলের পুরোপুরি কার্যক্ষমতা বা যুদ্ধোপযোগিতা ফিরে পেতে হলে ৮টি মিগ-২৯-এর ১৬টি ইঞ্জিন বদলে নেয়া দরকার। রাশিয়ান বিশেষজ্ঞরা তখন আরও জানিয়েছিলেন ইঞ্জিন না বদলালে বিমানগুলো হাইস্পিড ম্যানুভার করতে পারবে না। এছাড়া আফটার বার্নার ব্যবহারও বন্ধ রাখতে হবে। মতামত প্রদানে তখন রাশিয়ান বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, ইঞ্জিন পরিবর্তন না করলে মিগ-২৯ বিমানগুলো কার্যক্ষমতা হারিয়ে যে কোনো সময় দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর কিছুদিন পরেই সরকার পরিবর্তন হয়। এতে মেরামতের বিষয়ে আর নতুন করে কোনো চুক্তি হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার তখন ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর তত্কালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান কেনায় রাষ্ট্রের ৭০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত অপচয় ও আত্মসাতের মামলা করেছিল। মামলাটিতে চার্জ গঠনের পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে সম্প্রতি হাইকোর্ট বিভাগ পুরো মামলা বাতিল করে দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান মিগ-২৯ ক্রয় করার সময় দেশে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। অভিযোগ উঠেছিল রাশিয়া থেকে পুরনো মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান উচ্চমূল্যে ক্রয় করে আনা হয়েছে। কারণ তড়িঘড়ি করে চুক্তির মাত্র ৬ মাসের মাথায় রাশিয়া বিমানগুলো সরবরাহ করে। এত অল্প সময়ে ৮টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান তৈরি সম্ভব নয় বলে তখনই বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছিলেন। এছাড়া বিমান ক্রয়ের সময় প্রয়োজনীয় মেরামত ও খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহের চুক্তি না থাকায় দেশে আসার পর থেকেই এগুলো নিয়ে বিপাকে পড়ে বিমানবাহিনী। খুচরা যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হলে অনেক সময় বিমানবাহিনী বিভিন্ন দেশের দ্বারস্থ হয়েছে। এমনকি ভারতের দ্বারস্থও হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয় মিগ-২৯ সরবরাহকারী রাশিয়া। একপর্যায়ে ইউক্রেন ও পোল্যান্ড থেকে সেকেন্ডহ্যান্ড যন্ত্রাংশ নিয়ে আসা হয়। যা এই বিমান মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। এগুলো ব্যবহার করায় মিগ-২৯ বিমানে নানারকম যান্ত্রিক ত্রুটি আরও বাড়তে থাকে। পরে রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রকৌশলীদের দ্বারস্থ হলে তারা ভিন্ন দেশের সেকেন্ডহ্যান্ড যন্ত্রাংশ ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করেন। তারা জনিয়ে দেন, মিগ-২৯-এর মতো স্টেট অব দ্য আর্ট বা অত্যাধুনিক বিমানে পুরনো যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা ঠিক হবে না। এই অবস্থায় বিমানবাহিনী বাধ্য হয়ে অন্তত দু’টি বিমানকে সচল রাখতে ক্যানিবিলাইজেশন শুরু করে। অর্থাত্ দু’টি বিমান সচল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ বাকি ৬টি বিমান থেকে খুলে এনে ব্যবহার করতে শুরু করে। দীর্ঘদিন ধরে এই ক্যানিবিলাইজেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে দু’টি বিমানকে কোনোরকমে সচল রাখা হচ্ছে। সচল থাকা এই দু’টি বিমানের ব্যবহার উপযোগী গোলাবারুদ, মিসাইল ও বোমার সঙ্কট রয়েছে। বিমানবাহিনীর সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের সূত্রের মতে, কার্যত সচল থাকা দু’টি বিমানেরও এখন আর যুদ্ধে ব্যবহারযোগ্য নয়।
এদিকে গত জানুয়ারি ও ফেবু্রয়ারি মাসে রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট কোম্পানির টেকনিশিয়ান প্রতিনিধি দল আসে। তারা বিমানগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফেরত যায় গত মার্চে। সর্বশেষ রাশিয়ার সঙ্গে ২০০৯ সালে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের জন্য টেকনিক্যাল কো-অপারেশন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় রাশিয়ান টেকনিশিয়ানরা এসে বিমানগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যান। তবে কোনোকরমে সচল থাকা দু’টি বিমানের বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে টেকনিক্যাল কো-অপারেশন চুক্তি স্বাক্ষর হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বাকি ৬টি গ্রাউন্ডেড হয়ে থাকা মিগ-২৯-এর ভাগ্যে কি ঘটবে এই প্রশ্ন বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে। সূত্র জানায়, রাশিয়ার টেকনিশিয়ান টিম চলে যাওয়ার সময় জানিয়ে গেছে, গ্রাউন্ডেড হয়ে থাকা ৬টি মিগ-২৯কেও সচল করা সম্ভব। এক্ষেত্রে নতুন করে ইঞ্জিন মেরামতের পাশাপাশি অনেক খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হবে। কিছু পুরনো যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে হবে এবং ক্যানিবিলাইজেশনের কারণে যেসব যন্ত্রাংশ অন্য বিমানে নেয়া হয়েছে সেগুলো পুনঃস্থাপন করতে হবে। কারণ এরই মধ্যে এই বিমানগুলোর কিছু কিছু যন্ত্রাংশ খুলে সচল থাকা দু’টি বিমানে লাগানো হয়েছে। শুধু যন্ত্রাংশ আমদানি করলেই চলবে না, অচল বিমানগুলোর কোনো কোনোটিকে রাশিয়ায় পাঠাতে হবে মেরামতের জন্য। বিমানবাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের মতো শক্তিশালী বিমানও প্রয়োজন রয়েছে এই বাহিনীতে।
উল্লেখ্য, মাঝে একবার রাশিয়াকে পাশ কাটিয়ে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান মেরামতের জন্য ইউক্রেনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এতে এই যুদ্ধবিমানগুলোর প্রস্তুতকারী এবং মূল সরবরাহকারী দেশ রাশিয়ার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। অথচ আকাশে উড়তে ফিটনেস সার্টিফিকেট (আকাশে উড়তে সক্ষম কিনা) দিতে পারেন রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কর্তারা।
সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মিগ-২৯ অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান যা মার্কিন এফ-১৬-এর সমতুল্য। মার্কিন এফ-১৬ জঙ্গি বিমানের কাউন্টার পার্ট হিসেবে শোভিয়েত রাশিয়া মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান তখন তৈরি করে। রাষ্ট্রের বিপুল অংকের টাকা খরচ করে কেনা মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানগুলোকে অকেজো ফেলে রাখা হয়েছে। এই বিমানগুলো সচল না থাকায় বিমানবাহিনীর সার্বিক ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। কার্যত বিমানবাহিনীর একটি ইউনিট অচল অবস্থায় আছে।
মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয়ে দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের ৭০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছিল দাবি করে বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরো মামলা করেছিল। ২০০১ সালের ১১ ডিসেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকজনকে আসামি করে এই টাকা অপচয়ের অভিযোগে দুর্নীতির মামলাটি হয়েছিল। পরে হাইকোর্ট বিভাগে শেখ হাসিনা কোয়াশমেন্ট আবেদন করলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়। হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে বলা হয়েছিল, মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয়ে দুর্নীতির যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। এই তথ্য-উপাত্তগুলো নিয়ে নিম্ন আদালতে বিচার কার্যক্রম চলতে পারে বলে হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছিল। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন শেখ হাসিনা। তত্কালীন প্রধান বিচারপতি মোঃ রুহুল আমিনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ফুলকোর্ট শুনানি শেষে শেখ হাসিনার আপিলটি খারিজ করে দেন। এতে বহাল থাকে হাইকোর্ট বিভাগের রায়। আপিল বিভাগের রায়েও বলা হয় মামলাটিতে বিচার করার মতো যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। আপিল বিভাগের রায়ের পর বিগত জরুরি অবস্থার সরকারের সময় নিম্ন আদালতে মামলাটির বিচার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। চার্জ গঠন করা হয় শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট আসামিদের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে তখন বিদেশে অবস্থান করছিলেন। আসামির অনুপস্থিতিতে চার্জ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তখন হাইকোর্ট বিভাগে আরেকটি রিট আবেদন করেন শেখ হাসিনা। এই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি শেষে সম্প্রতি পুরো মামলাটি বাতিল করে দেয়া হয়। লন্ডনে আওয়ামী লীগ ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে দলীয় বৈঠকে যোগদানকারী বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী চার্জ গঠনে ত্রুটির কারণে পুরো মামলাটি বাতিল করে রায় ঘোষণা করেন।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/29/29662

ধর্ষণের ঘটনায় ঢাকা পলিটেকনিকে তোলপাড় : ধর্ষক দুই ছাত্রলীগকর্মী বহিষ্কার

28/04/2010
স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে প্রথমবর্ষের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ গতকাল বিভাগীয় প্রধানসহ শিক্ষকদের নিয়ে সভা করে ধর্ষক ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। দুদিন গত হলেও থানা পুলিশ এখনও কোনো মামলা নেয়নি। আসামিরা ইন্সটিটিউট এলাকায় এক প্রকার প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এদিকে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশিত হওয়ায় সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সাধারণ ছাত্রীরা ধর্ষক দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার ও উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছে। গত রোববার দিনদুপুরে তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ক্লাসরুমে প্রথমবর্ষের ছাত্রীকে ছাত্রলীগের জাকির গ্রুপের সদস্য মোবারক হোসেন ও অমিত ধর্ষণ করে। ছাত্রীর চিত্কারে ইনস্টিটিউটে শিক্ষকরা ছুটে আসেন। ছাত্রীকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করে শিক্ষকদের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাত্রীটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিক্ষকদের কাছে তার করুণ পরিণতির কথা জানায়। উপস্থিত শিক্ষকরা এ ঘটনা শুনে হতভম্ব হয়ে যান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা করে তারা বিষয়টিকে গোপন রাখেন। কিন্তু এ ঘটনা আস্তে আস্তে ছাত্র-ছাত্রীদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষকরা এনিয়ে জরুরি সভা আহ্বান করেন। গতকাল শিক্ষকদের জরুরি সভায় ছাত্রলীগে দুই ক্যাডার ইন্সটিটিউটের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র মোবারক হোসেন ও তার সহযোগী একই বর্ষের অমিতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই দুই ধর্ষক যাতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর ভর্তি হতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যদি তারা কোথাও ভর্তি হতে যায় তাহলে তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে এ ঘটনায় ইন্সটিটিউটের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ভয়ে কোনো ছাত্র-ছাত্রী এ ঘটনায় প্রতিবাদও করতে পারেনি। তারা সন্ধিহান যে, এ ঘটনার বিচার কর্তৃপক্ষ আদৌ করতে পারবে কিনা? গতকাল ইনস্টিটিউট এলাকায় গিয়ে থমথমে পরিস্থিত লক্ষ্য করা যায়। সাধারণ ছাত্ররা যাতে মিছিল না করতে পারে সেজন্য ছাত্রলীগ ক্যাডাররা কড়া নজর রাখছে।
অপরদিকে দুদিন গত হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ দুই ধর্ষককে গ্রেফতারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। গতকাল পর্যন্ত থানায় কোনো মামলাও দায়ের হয়নি। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, ভিকটিম বা অন্য কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ না করার কারণে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। মামলা হলে তিনি আইনানুগ কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। তবে ঘটনাটি তিনি শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, লোকলজ্জার কারণে ধর্ষিতা মেয়ের পক্ষে এখনও কোনো অভিযোগ জানানো হয়নি। ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে মামলা করার বিষয়েও গতকাল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি। শুধু বলেন, দোষী দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/28/29522

চুনারুঘাটে আ’লীগ : নেতার হামলায় সাংবাদিক হাসপাতালে



28/04/2010
হবিগঞ্জ ও চুনারুঘাট প্রতিনিধি
সংবাদ প্রকাশের জের ধরে নিউ নেশন ও হবিগঞ্জ সমা-চার পত্রিকার হবিগঞ্জের চুনা-রুঘাট প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান তাহের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। সন্ত্রাসীরা তার ভিডিও ক্যামেরা, স্টিল ক্যামেরা, দুটি মোবাইল সেট ও টাকা নিয়ে গেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহেরের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তাকে আক্রমণ করে। জানা গেছে, সোমবার বিকেলে মনিরুজ্জামান তাহের চণ্ডিছড়া চা-বাগান থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে মোটরসাইকেলে চুনারুঘাট সদরে ফিরছিলেন। তিনি দেওরগাছ এলাকায় আসামাত্র ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তার গতিরোধ করে এবং হামলা চালায়। তার চিত্কারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে তাকে রক্ষা করে। খবর পেয়ে চুনারুঘাট থানার এএসআই হরিদাশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। চিকিত্সকরা তাকে হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালে রেফার করেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মনিরুজ্জামান তাহের জানান, আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহেরের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তার ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা তার একটি ভিডিও ক্যামেরা, একটি স্টিল ক্যামেরা, দুটি মোবাইল সেটসহ নগদ টাকা লুটে নেয়।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ ফারুক আহমেদ খান জানান, সাংবাদিক তাহেরকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। কারা হামলার সঙ্গে জড়িত এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে হামলাকারীদের পায়নি।
মনিরুজ্জামান তাহেরের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন চুনারুঘাট প্রেসক্লাব নেতারা। তারা হামলাকারীদের শাস্তির দাবি করেন।
এদিকে চুনারুঘাট প্রেসক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক মনিরুজ্জামান তাহেরের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল চুনারুঘাট প্রেসক্লাবে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সাংগঠনিক সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাবেক সভাপতি ফারুক উদ্দিন চৌধুরী, মোঃ সিরাজুল হক, মোঃ নুরুল আমিন, মোঃ হাছান আলী, মোঃ কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, জামাল হোসেন লিটন, ইসমাইল হোসেন বাচ্চু, মহিদ আহমেদ চৌধুরী, মোস্তাক আহমেদ তরফদার, রাইরঞ্জন পাল, জুনায়েদ আহমেদ, এসএম তাহের খান, দুলাল মিয়া প্রমুখ। সভায় হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের সাংবাদিকদের জানান, হামলার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়ানো হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত রোববার হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকায় ‘চান্দপুর চা-বাগানে ওজনে কম ও নিম্নমানের রেশন দেয়ায় শ্রমিকদের ক্ষোভ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হন চেয়ারম্যান আবু হাতের।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/28/29510

Saturday 24 April 2010

সুপ্রিমকোর্টে সেদিন যা ঘটেছিল



স্টাফ রিপোর্টার
সুপ্রিমকোর্টে ভাংচুর ও তাণ্ডবের একটি ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ওই তাণ্ডবে অংশগ্রহণকারী একজনকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় বিতর্কের সূত্রপাত হয়। সম্প্রতি সরকার সমর্থক সিনিয়র আইনজীবীরা ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বরের সেই ঘটনাকে বিকৃতভাবে জাতির সামনে উপস্থাপন করছেন। ২০০৬ সালে ওই ঘটনার প্রতিবাদে খোদ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা টানা ৩ দিন এজলাসে বসা থেকে বিরত ছিলেন। ঘটনাটি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় দৈনিক আমার দেশ সেদিনের ঘটনা আবারও উপস্থাপন করছে।
সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের চেম্বারে ব্যাপক ভাংচুর এবং গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর। পরের দিন সব জাতীয় দৈনিকে এ ঘটনার সংবাদ শীর্ষ শিরোনাম হিসেবে প্রকাশিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে শুনানির জন্য তত্কালীন অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি শুনানি স্থগিত রাখার নির্দেশ দিলে এ ঘটনা ঘটানো হয়। প্রধান বিচারপতির এই আদেশে ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা সুপ্রিমকোর্ট ভবনে প্রধান বিচারপতির এজলাসের ভেতর ও বাইরে সহিংসতা ছড়ায়। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের সমর্থক আইনজীবীদের সঙ্গে লাঠি হাতে অনেক বহিরাগত যুবককে আদালত প্রাঙ্গণে ভাংচুরে অংশ নিতে দেখা গেছে সেদিন। দেড়ঘণ্টা ফ্রিস্টাইল ভাংচুর এবং একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের পর পুলিশ আসে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানি স্থগিত করার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা তত্কালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের পদত্যাগ দাবি করেন। তারা প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তার আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
প্রধান বিচারপতির নির্দেশে মামলাটির শুনানি কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণার পরপরই আদালত কক্ষে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল সমর্থক আইনজীবীরা। ওই মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম ও ড. কামাল হোসেনসহ অন্যদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা স্লোগান দিতে দিতে প্রধান বিচারপতির এজলাসের দিকে যান।



এর আগে রোকনউদ্দিন মাহমুদ চিত্কার করে বলেন, প্রধান বিচারপতির এ বিষয়ে কোনো এখতিয়ার নেই। প্রধান বিচারপতি কোনো মামলার শুনানি কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিতে পারেন না। একই কথা চিত্কার করে বলেন ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম। এ সময় আদালতে উপস্থিত ১৪ দলের আইনজীবীরা হৈচৈ শুরু করেন এবং অনেকে লাফিয়ে টেবিলের ওপরে ওঠেন। তারা আদালতে উপস্থিত সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকেন এবং তাদের প্রতি তেড়ে যান। এতে আদালতে উপস্থিত চারদলীয় জোটের সমর্থক আইনজীবীরাও প্রতিবাদ জানালে শুরু হয় হৈচৈ। তখনও বিচারপতিরা এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। বিচারপতিদের এজলাসে বসে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ সমর্থক কয়েকজন আইনজীবী লাফিয়ে টেবিলে ওঠেন এবং চিত্কার করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে আক্রমণের জন্য এগিয়ে যেতে থাকেন। একপর্যায়ে ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা এনেক্স ভবনের এই আদালত থেকে প্রধান বিচারপতির চেম্বারের দিকে দৌড়ে যান। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির তখন উপস্থিত ছিলেন না। তারা প্রধান বিচারপতিকে না পেয়ে তার চেম্বার ও প্রধান বিচারপতির আদালতে ভাংচুর চালান। এ সময় বেশ কিছু দরজা-জানালা ও চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করা হয়। ছুড়ে মারা হয় প্রচুর আইনের বই। অনেক বই ওইদিন বিকালেও এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওপরে ছুড়ে মারা একটি চেয়ার ভেঙে ভবনের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন আইনের বই তারা তছনছ করেন তারা। প্রধান বিচারপতির চেম্বারের সামনে রাখা ফুলের টবগুলো একে একে দোতলা থেকে ছুড়ে মারা হয় নিচে। তারা প্রধান বিচারপতির চেম্বারের সামনে ওড়ানো জাতীয় পতাকা টেনে নিচে নামান। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগদানকারী বহিরাগতরা পুরো সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণজুড়ে তাণ্ডব চালায়। ওই ভাংচুর থেকে রক্ষা পায়নি অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরও।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/25/29079